কলকাতার দুর্গোৎসব কেন্দ্রের চেষ্টাতেই পেয়েছে ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ তকমা! মহাষষ্ঠীতে মোদীর ‘মন কী বাত’
আনন্দবাজার | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বোধনের দিনেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতায় কলকাতার দুর্গাপুজোর জন্য তাঁর সরকারের ‘প্রয়াসের’ প্রসঙ্গ। ‘মন কী বাত’-এ মোদীর বক্তব্য, ভারত সরকারের প্রচেষ্টাতেই কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আরএসএসের শতবর্ষ পূর্তির প্রসঙ্গও গুরুত্ব পেয়েছে। আসন্ন বিজয়া দশমীর দিন আরএসএস প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্ণ হবে। সে কথা উল্লেখ করে মোদী তাঁর ভাষণে আরএসএসের ভূয়সী প্রশংসা করলেন।
প্রতি মাসের শেষ রবিবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘মন কী বাত’ সম্প্রচারিত হয়। এই রবিবার ছিল ১২৬তম পর্ব। ভাষণে ছটপূজা সম্পর্কে মোদী বলেন, ‘‘ছট শুধু ভারতের নানা প্রান্তে নয়, গোটা বিশ্বের নানা প্রান্তে পালিত হয়।’’ এই ‘ছট মহাপর্ব’কে ইউনেস্কো যাতে ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, তার জন্য ভারত সরকার চেষ্টা করছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। সে প্রসঙ্গেই তিনি কলকাতার দুর্গাপুজোর প্রসঙ্গ টানেন। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কিছুকাল আগে ভারত সরকারের এই রকম প্রয়াসের কারণেই কলকাতার দুর্গাপুজো বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।’’
কলকাতার দুর্গাপুজোর এই স্বীকৃতি পাওয়ার কৃতিত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকারও দাবি করে। কেন্দ্র না রাজ্য, কার প্রচেষ্টায় কলকাতার দুর্গাপুজো এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে দাবি-পাল্টা দাবির আবহ তৈরি হয়েছিল। রবিবার মোদীর ভাষণে স্পষ্ট, কলকাতার দুর্গাপুজোর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির কৃতিত্ব পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে ভাগ করে নিতে তিনি প্রস্তুত নন। ঘটনাচক্রে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ পুজোর মধ্যেই সম্প্রচারিত হওয়ায় বিষয়টি আলাদা মাত্রা পেয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
আরএসএস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রায় আড়াই মিনিট সময় খরচ করেছেন ১২৬তম ‘মন কি বাত’ ভাষণে। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিন পরই আমরা বিজয়া দশমী পালন করব। এ বারের বিজয় দশমী একটা অন্য কারণেও বিশেষ। এই বিজয়া দশমীতে আরএসএস প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ১০০ বছরের এই যাত্রা যেমন অদ্ভুত, অভূতপূর্ব, তেমনই প্রেরণাদায়ী।’’ হেডগেওয়ার কোন লক্ষ্য সামনে রেখে আরএসএস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, গোলওয়ালকর কী ভাবে আরএসএসকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, সে সব প্রসঙ্গ উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রবিবার অসমের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গার্গের আকস্মিক মৃত্যুর প্রসঙ্গও এসেছে। জুবিনের মৃত্যুতে শোক ব্যক্ত করার পাশাপাশি তাঁর গানের বিষয়েও মুগ্ধতা প্রকাশ করেন মোদী।
ভাষণে একাধিক বার শোনা গিয়েছে দেশি পণ্য কেনাবেচার উপরে জোর দেওয়ার আহ্বান। ‘ভোকাল ফর লোকাল’ বা স্থানীয় জিনিসপত্র কেনাবেচার উপরে জোর দেওয়ার কথা মোদী বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বলে আসছেন। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে শুরু হওয়া শুল্কযুদ্ধের আবহে তাঁর সেই ‘আত্মনির্ভর ভারত’ বা ‘স্বদেশি’ সংক্রান্ত আহ্বান সম্প্রতি বার বার শোনা যাচ্ছে। ‘মন কি বাত’ ভাষণকেও সেই আহ্বান আবার শোনানোর জন্য ব্যবহার করলেন মোদী। আগামী ২ অক্টোবর গান্ধীজয়ন্তী উপলক্ষে কোনও না কোনও খাদি সামগ্রী কিনতে প্রত্যেক দেশবাসীকে অনুরোধ করলেন। দেশ জুড়ে চলতে থাকা উৎসবের মরসুমে জিএসটি ছাড়ের সুবিধা নিয়ে দেশি পণ্য কেনাকাটা করার পরামর্শও দিলেন।