• জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক সোনম ওয়াংচুককে নিয়ে স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমোর বিস্ফোরক অভিযোগ...
    আজকাল | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) এর অধীনে গ্রেপ্তারের পর দুই দিন কেটে গেলেও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জলবায়ু কর্মী ও র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কথা বলতে পারেননি তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি জে. আংমো।

    তিনি জানিয়েছেন, ২৬ সেপ্টেম্বর লেহ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে তাঁর পৈতৃক গ্রাম থেকে ওয়াংচুককে আটক করা হয় এবং হুড়োহুড়ি করে রাজস্থানের যোধপুরে  নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে ফোনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তিনি যেন জোধপুরে নামার পরপরই স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও ফোনকল পাননি তিনি।

    খবরে প্রকাশ, জোধপুর জেলে তাঁকে একটি একক সেলে রাখা হয়েছে, যেখানে সারাক্ষণ সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চলছে। তবে এই খবরের সত্যতা যাচাই করার উপায় নেই গীতাঞ্জলির কাছে। তিনি বলেন—“ওঁর আন্দোলন তো ছিল সম্পূর্ণ গান্ধীয় পদ্ধতির—সত্যাগ্রহ, পদযাত্রা, শান্তিপূর্ণ উপায়ে। অথচ তাঁকেই গ্রেপ্তার  করা হয়েছে, আর এনএসএ চাপানো হয়েছে।”

    তিনি অভিযোগ করেন, লাদাখে ষষ্ঠ তফসিল এবং রাজ্যের মর্যাদা দাবি করার কারণে সরকারি স্তরে একের পর এক চাপ আসছিল। তাঁর কথায়,“আমরা জানতাম সরকার ওঁকে লাদাখ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে, যাতে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে পারেন। কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক, যিনি সেনাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কাজ করেছেন, চীনা বই ও সামগ্রী বর্জনের ডাক দিয়েছেন, তাঁকেই ‘দেশদ্রোহী’ বলা হচ্ছে—এ আসলে শাসকশ্রেণির বিবেককে আরও উন্মোচিত করছে।”

    তিনি আরও জানান, ওয়াংচুক ও তাঁর শুরু করা প্রতিষ্ঠানগুলি—হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অলটারনেটিভস লাদাখ (HIAL) এবং Students’ Educational and Cultural Movement of Ladakh—গত চার বছর ধরে কেন্দ্রীয় চাপে রয়েছে। ২০২৪ সালে তিনি স্বয়ং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তাঁকে জানানো হয়, ষষ্ঠ তফসিলের দাবি চলতে থাকা পর্যন্ত HIAL-এর জমি বরাদ্দ ফাইল ঝুলিয়ে রাখা হবে।

    লাদাখ স্বায়ত্তশাসিত হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের নির্বাচন সামনে আসতেই এই গ্রেপ্তারকে  রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন আংমো। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি ষষ্ঠ তফসিলের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করায় মানুষ ওদের ভোট দেবে না। ঠিক তার আগেই ওয়াংচুককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে মানুষের লড়াই আরও দৃঢ় হবে। তিনি ছিলেন মানুষের কণ্ঠস্বর, মানুষের প্রতিনিধি।” তিনি মনে করিয়ে দেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি লাদাখ আসন হারিয়েছিল—যা মানুষের অসন্তোষের স্পষ্ট বার্তা।

    সরকারি মহল থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত একটি জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ‘পাকিস্তান সংযোগ’ সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে গীতাঞ্জলির জবাব—“সম্মেলনটি ছিল জাতিসংঘ আয়োজিত। তিনি সেখানে ভারতীয় পতাকা উঁচু করেছিলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মিশন লাইফ’ কর্মসূচিরও প্রশংসা করেছিলেন। অথচ তাঁকেই পাকিস্তানপন্থী বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।”

    তিনি আরও জানান, তিনি নিজেও সেই সফরে গিয়েছিলেন, কারণ বক্তা হিসেবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এছাড়া তাঁর পারিবারিক শিকড়ও পাকিস্তানের ভূখণ্ডে—তিনি প্রথমবার নিজের পরিবারের উৎসস্থল দেখতে যান। স্বামীকে নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, “ওঁকে সহজে ভাঙা যাবে না। তিনি সমালোচনা বা প্রশংসা নিয়ে কখনও আবেগতাড়িত হন না। নীরবে দেশ ও প্রকৃতির কল্যাণে কাজ চালিয়ে যাবেন। এটিই ওঁর আলাদা করে তোলে।”

    এনএসএ-তে আটক সোনম ওয়াংচুককে লাদাখ থেকে সরিয়ে জোধপুর জেলে একাকী সেলে রাখা হয়েছে। স্ত্রী গীতাঞ্জলি এখনও পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ষষ্ঠ তফসিলের দাবি ও আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই গ্রেফতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ। পাকিস্তানে জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দেওয়াকে ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলেও দাবি। গীতাঞ্জলির মতে, ওয়াংচুক কোনও চাপেই ভাঙবেন না; তিনি নীরবে দেশ ও পরিবেশের জন্য কাজ চালিয়ে যাবেন।
  • Link to this news (আজকাল)