আজকাল ওয়েবডেস্ক: উৎসবের আবহে ঘোর দুর্যোগ অন্ধ্রপ্রদেশে। নিম্নচাপের জেরে প্রবল বৃষ্টির আশঙ্কা একটানা। গোটা রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আগেভাগেই চরম সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। প্রবল বৃষ্টির জেরে জেলায় জেলায় বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে।
মৌসম ভবন সূত্রে জানা গেছে, আগামী পাঁচদিন অন্ধ্রপ্রদেশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর জেরে উপকূলবর্তী এলাকা ও নীচু এলাকায় জল জমতে পারে। বন্যার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মৎস্যজীবীদের জন্যেও সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস। আগামী পাঁচদিন মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বরের আশেপাশে বঙ্গোপসাগরে একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হয়েছিল। এটি কয়েক দিনের মধ্যে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার ফলে এই রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপরে যে ঘূর্ণাবর্ত ছিল, তার ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগরের মধ্যভাগ ও সংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। যা শুক্রবার দক্ষিণ ওড়িশা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল বরাবর উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। আর শনিবার সকালে সেটি দক্ষিণ ওড়িশা-উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল পার করবে।
এই সিস্টেমের প্রভাবে পশ্চিমা বায়ু পিছু হটবে এবং বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশের সমতল অঞ্চলেও মাসের শেষ নাগাদ বৃষ্টি ফিরে আসতে পারে। আবহাওয়া দপ্তরের মতে, উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাহাড়ি রাজ্যগুলির আবহাওয়া এখন শুষ্ক থাকবে। হিমাচল প্রদেশ এবং জম্মু-কাশ্মীরের কিছু অংশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকলেও, স্বাভাবিকের চেয়ে কম আর্দ্রতার কারণে বৃষ্টি কম হবে। উত্তরাখণ্ডে হালকা বৃষ্টি চলতে থাকবে, অন্যদিকে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দিল্লি থেকে বর্ষা পুরোপুরি বিদায় নিতে চলেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসেই অন্ধ্রপ্রদেশে প্রবল বৃষ্টি ও বন্যায় কারণে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। টানা বৃষ্টিতে বিঘা বিঘা চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। বৃষ্টির কারণে বহু ট্রেনও বাতিল করা হয়েছিল সেই সময়। হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পড়েছিল।
বন্যার কারণে দক্ষিণ-মধ্য রেল ১৪০টি ট্রেন বাতিল করেছিল। ৯৭টি ট্রেনের গতিপথ বদল করা হয়েছিল। ট্রেন বাতিলের কারণে বহু যাত্রী এবং পর্যটক সমস্যায় পড়েছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানার বিভিন্ন স্টেশনে ছ’হাজারের বেশি মানুষ আটকে ছিলেন বলে জানা গিয়েছিল।
রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। উপকূলের বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অন্তত ১৭ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের আশ্রয়ের জন্য বহু ত্রাণশিবিরও খোলা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশের বেশ কিছু এলাকায় ধস নেমেছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়া শহর। শুধু ওই শহরেই দু’লক্ষের বেশি মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিজয়ওয়াড়ার মোগলরাজপুরমে ধসে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। বৃষ্টির জেরে পাহাড় থেকে দু’টি বাড়ির উপরে বড় পাথর গড়িয়ে পড়ে পাঁচ জনের প্রাণ গিয়েছে।