• পুজোয় চা, পানের দোকান তৃণমূল প্রধানের!
    বর্তমান | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: সারা বছর বাড়িতেই মুদি দোকান চালান। দোকানে বসেই এলাকার বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শোনেন। প্রয়োজনীয় শংসাপত্র দেন। দুর্গাপুজোতেও জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান অনিতা রাউতের সেই রুটিনের বদল হল না। পাতকাটা কলোনি অগ্রণী সংঘের পুজো মণ্ডপের কাছে চা, পান, ঠান্ডা পানীয়ের দোকান দিয়েছেন প্রধান। দোকানদারির ফাঁকেই মোবাইলে খোঁজখবর রাখছেন পঞ্চায়েতের প্রতিটি প্রান্তের। পুজোর সময় সর্বত্র পানীয় জল পৌঁছচ্ছে কি না কিংবা সব জায়গায় ঠিকমতো বর্জ্য সংগ্রহ হচ্ছে তো? জেনে নিচ্ছেন সবটা। দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশ। দোকানে বেচাকেনা করতে করতেই উৎসবের দিনগুলিতে তাঁর এলাকার বাসিন্দারা সবাই সুস্থ আছেন কি না সেটা জেনে নিতেও ভুলছেন না। প্রধানের এই ভূমিকায় মুগ্ধ পাহাড়পুরের বাসিন্দারা। একইসঙ্গে পাতকাটায় যাঁরা পুজো দেখতে আসছেন, তাঁরাও থমকে দাঁড়াচ্ছেন প্রধানের দোকানের সামনে। কেউ কেউ আবার তাঁর দোকানে ঢুঁ মেরে কেনাকাটাও করছেন। হাসিমুখে খরিদ্দার সামলাচ্ছেন অনিতা। তাঁর কথায়, প্রধান হিসেবে পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের অভাব অভিযোগ শোনা আমার কাজ। কিন্তু নিজের সংসার চালাতে সারা বছর বাড়িতে মুদি দোকান চালাতে হয় আমাকে। পুজোর কদিন একটু ভালো বেচাকেনার আশায় প্যান্ডেলের পাশে দোকান দিই। এটুকুই আমার রোজগারের সম্বল। সারাবছর পাহাড়পুর পঞ্চায়েতে দৈনিক হাজিরায় কাজ করেন প্রধানের স্বামী। পুজোয় তিনিও স্ত্রীর সঙ্গে দোকানে বসছেন। কখনও আবার ছুটছেন ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্প্রে করার কাজে। রাজ্যের শাসক দলের দু'বারের প্রধান হয়েও সংসার চালাতে পুজোয় দোকান দেওয়ায় অনিতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিরোধী দলের নেতারাও। তাঁদের কথায়, তৃণমূলের আর পাঁচজন জনপ্রতিনিধির থেকে পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের প্রধান একেবারেই আলাদা। তিনি গাড়ি ব্যবহার করেন না। বেশিরভাগ দিন বাড়ি থেকে টোটো করে পঞ্চায়েত অফিসে যান। টোটো না পেলে কিংবা কোনও জরুরি দরকার হলে স্বামীর পুরনো বাইকে যাওয়া আসা করেন। অনিতা বলেন, পুজোয় দোকান থেকে যেটুকু আয় হবে, তা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় কাজে লাগবে। সংসারের কিছু জিনিসপত্র কিনতে পারব। এটুকুই আশা।  প্রধান অনিতা রাউতের বাড়িতে নলকূপ বা কুয়ো নেই। রাস্তার টাইমকলের চাতালে বসে স্নান সারেন! গৃহস্থলীর অন্যান্য কাজেও ভরসা ওই কল। এক কামরার ছোট্ট ঘরের সঙ্গে রয়েছে মুদি দোকান। সেখান বয়ামে অল্প কিছু বিস্কুট, লজেন্স। পান খাওয়ার চুন-সুপারি, খাতা-পেন। এটা তাঁর অফিসও বটে! সকাল থেকে গ্রামের লোকজন ভিড় করেন। দোকানে বসে তাঁদের সার্টিফিকেট লিখে দেন তিনি। দোকানের মাঝে পুরনো একটা সেলাই মেশিন রাখা। সময় পেলে টুকটাক সেলাই করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের দু’বারের এই পঞ্চায়েত প্রধানের ঘরে উঁকি মারলে খানিকটা অবাকই হতে হয়। ছোট্ট কামরার ভিতর দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে চারজনের বসবাস। ডাইনিং, বেডরুম বলে কিছু নেই। একদিকে বাসনপত্র, পাশে ডাঁই করা জামাকাপড়। দু’ফুট জায়গায় কোনওমতে একটা গ্যাস সিলিন্ডার এবং ওভেন রাখার জায়গা হয়েছে। সেখানে বসেই সারেন রান্নাবান্না। তৃণমূল কংগ্রেসের আর পাঁচজন প্রধানের গাড়ি-বাড়ি, বৈভব ঘিরে যখন প্রশ্ন ওঠে, তখন জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েও অনিতার সাদামাটা জীবনযাপনের প্রশংসা করছেন বিরোধীরাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আদর্শ অনিতার। বললেন, দিদির আদর্শই আমার জীবনে চলার পথে প্রেরণা।
  • Link to this news (বর্তমান)