• ‘রঘু ডাকাত’ ও ‘রক্তবীজ ২’ নিয়ে সমাজমাধ্যমে এ কোন লড়াই! কুৎসা এড়িয়ে কোন ছবির কত ব্যবসা?
    আনন্দবাজার | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • কেউ কিছুই বলেননি। বলছেনও না। না বলছেন প্রযোজক-অভিনেতা দেব। না বক্তব্য রাখছেন বাকি প্রযোজকেরা। অথচ, যত যুদ্ধ অন্য ময়দানে। গত পাঁচ দিন ধরে পুজোয় মুক্তি পাওয়া মূলত দু’টি ছবি ঘিরে সমাজমাধ্যমে কুৎসার বানভাসি! এক, ‘রঘু ডাকাত. দুই’, ‘রক্তবীজ ২’। অভিযোগ, ‘রঘু ডাকাত’ নাকি ‘মাফিয়া কার্ড’-এর জোরে প্রেক্ষাগৃহ এবং ছবি প্রদর্শন-সংখ্যার সিংহভাগ দখল করেছে। যার জেরে কোণঠাসা দ্বিতীয় ছবিটি। সেই সঙ্গে কোণঠাসা একই সময়ে মুক্তি পাওয়া ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ ছবি দু’টিও।

    অথচ, কোনও কোনও মহল থেকে শোনা গিয়েছিল, পুজোর ছবিমুক্তির সময় নাকি সরকারের তৈরি করে দেওয়া ‘স্ক্রিনিং কমিটি’ ঘোষণা করেছিল, প্রত্যেক ছবিকে সমান সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ এবং প্রদর্শন সময় দিতে হবে।

    পুজোয় চারটি ছবির মুক্তির পরেও উঠেছে নানা অভিযোগ। সমাজমাধ্যমে কোথাও দাবি করা হচ্ছে, ‘রঘু ডাকাত’ নাকি গ্রাস করছে বাকি ছবির ব্যবসা। টিকিট বিক্রির ভুয়ো পরিসংখ্যান দিয়ে এমনও বার্তা দেওয়া হচ্ছে, ছবিটি খুবই খারাপ ব্যবসা করছে। বেশি সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ এবং প্রদর্শন সময় পাওয়ার পরেও। খবর, চুপচাপ বসে নেই দেবের অনুরাগীরা। তাঁরাও সমাজমাধ্যমে ‘রঘু ডাকাত’-এর হয়ে প্রচার সারছেন। ‘রক্তবীজ ২’ নিয়ে পাল্টা নেতিবাচক বার্তা ছড়াচ্ছেন।

    তা হলে কি গত দু’বছরের মতো দুই প্রযোজকের সেই পুরনো কাজিয়া আবার ফিরে এল? যার জেরে ছবিমুক্তির সুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছে বাকি দু’টি ছবি!

    এ ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন নিয়ে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল রাজ্য সরকারের ঠিক করে দেওয়া ‘স্ক্রিনিং কমিটি’র সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত, প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার অরিজিৎ দত্ত (প্রিয়া), নবীন চৌখানি (নবীনা), জয়দীপ মুখোপাধ্যায় (বিনোদিনী থিয়‌েটার), ছবির পরিবেশক শতদীপ সাহার সঙ্গে।

    পুজোর ছবি মুক্তি পাওয়ার আগে স্ক্রিনিং কমিটি একটি বৈঠক ডেকেছিল। পিয়ার সঙ্গে সেই বৈঠকে বসেছিলেন চারটি ছবির প্রযোজক, পরিবেশক এবং একাধিক প্রেক্ষাগৃহের মালিক। সূত্রের খবর, সেখানে পুজোয় কী কী ছবি মুক্তি পাবে সেটা নির্ধারণ হওয়ার পাশাপাশি সব ছবি সমান সংখ্যক প্রদর্শন সময় এবং প্রেক্ষাগৃহ পাবে— এই সিদ্ধান্তও নাকি নেওয়া হয়েছিল।

    তাই যদি হবে তা হলে অভিযোগ অনুযায়ী, কী করে একটি ছবি বেশি সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ এবং প্রদর্শন সময় পাচ্ছে? প্রশ্ন ছিল পিয়ার কাছে।

    তাঁর সাফ জবাব, “সরকার এই কমিটি গঠন করেছে কবে, কোন ছবি মুক্তি পাবে বা কটা ছবি মুক্তি পাবে— সেটা ঠিক করতে। কোন ছবি কটা হল বা শো-টাইম পাবে সেটা সম্পূর্ণ হলমালিক এবং পরিবেশকদের সিদ্ধান্ত। ওঁদের স্বাধীনতায় আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না।” তিনি আরও জানিয়েছেন, সে দিনের বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমকে কমিটি পুজোর ছবির নাম জানিয়েছিল। তার বাইরে আর কিচ্ছু বলেনি। পিয়ার পাল্টা রসিকতা, “ওই বৈঠকে ছবির সমান প্রদর্শন সময় নিয়ে যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন আমি কোথায় ছিলাম?”

    দিন কয়েক ধরে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অভিযোগে এও বলা হয়েছে, লড়াইয়ে থাকা একটি ছবির প্রযোজক দেব নাকি তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে বেশি সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ এবং প্রদর্শন সময় কেড়ে নিয়েছেন। এই অভিযোগ নিয়ে হলমালিক এবং পরিবেশক কী বলছেন?

    জবাবে তিন প্রেক্ষাগৃহ মালিক অরিজিৎ, নবীন, জয়দীপ জানিয়েছেন, এটা তাঁদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত। কেউ জোর করে কিছু চাপিয়ে দেননি। অরিজিতের কথায়, “দেব আমার ১৪ বছরের পুরনো বন্ধু। তা ছাড়া, ওর ছবি সব সময় ভাল ব্যবসা দেয়। ফলে, দেবের ছবি আমার প্রেক্ষাগৃহে সব সময় একটা বেশি শো পাবেই।” নবীন বলেছেন, “আমরা শো-এর সময় ঠিক করে প্রত্যেক ছবির প্রযোজকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। প্রত্যেকে খুশিমনে সেটা মেনে নেওয়ার পরেই কিন্তু প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তি পেয়েছে। ওঁদের আপত্তি থাকলে তখন কেউ কিছু জানালেন না কেন!” তিনি আরও যোগ করেছেন, “কারও যদি ধারণা হয়, দেব প্রভাব খাটিয়ে একটি শো বেশি পেয়েছেন, সে কথা আমায় এসে জানান। আমি তাঁকে এবং সংবাদমাধ্যমকে উত্তর দেব।” জয়দীপের রসিকতা, “যাঁরা নিন্দক তাঁরা কুৎসা দেখছেন। আমি প্রতিযোগিতা দেখছি। এটা হচ্ছে বলেই আমরা লাভের মুখ দেখছি।” তিনিও বলেছেন, “আমার সঙ্গে প্রত্যেক প্রযোজকের ভাল সম্পর্ক। কোনও প্রযোজক ছবির শো নিয়ে কোনও আপত্তি জানাননি।”

    শতদীপের কথায়, “কিছু প্রেক্ষাগৃহে যেমন দেব বেশি শো পেয়েছেন, কিছু হলে একই ভাবে বেশি শো পেয়েছে ‘রক্তবীজ ২’। সেটাও কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে।” তিনিও জানান, প্রযোজকের অনুমতি ছাড়া ছবিমুক্তি সম্ভব নয়।

    রইল বাকি বক্সঅফিসে লক্ষ্মীলাভ। তিন প্রেক্ষাগৃহের মালিক এবং পরিবেশক একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, বক্সঅফিসে এবং টিকিটবিক্রির ক্ষেত্রে এগিয়ে ‘রঘু ডাকাত’। শহর, শহরতলি এবং গ্রামেও। দ্বিতীয় স্থানে ‘রক্তবীজ ২’। সূত্রের খবর, একটি প্রেক্ষাগৃহে ‘রঘু ডাকাত’ এবং ‘রক্তবীজ ২’-এর ব্যবসায় অনেক ফারাক! একই চিত্র দু’টি ছবির টিকিটবিক্রির ক্ষেত্রেও। তাঁরা জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতায় না থাকলেও ভাল ফল করছে ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ ছবিদুটোও।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)