• প্রায় ২৫০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুজোর ঢাকে পড়ল কাঠি! গুড়বাড়ির দুর্গাপুজো এ বার দুর্গা বাড়িতে
    আনন্দবাজার | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সে ২৫০ বছর আগের কথা। গুড়বাড়ি গ্রামের স্বনামধন্য রায়চৌধুরী পরিবারে দীর্ঘকাল ধরে হয়ে আসা দুর্গাপুজো বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, সেই ভিটেতে প্রতিষ্ঠা হয় রাধাগোবিন্দের মূর্তির। শাস্ত্রমতে নিয়ম ছিল, যে বাড়িতে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা থাকে, সেখানে প্রতিমা পুজো করা যায় না।

    অবশ্য সে সব এখন অতীতের খাতায়। সময়ের স্রোত পেরিয়ে আবারও শুরু হল গুড়বাড়ির দেবীর আরাধনা। সেই সব প্রসঙ্গ পরে। এখন প্রশ্ন হল, কেন বন্ধ হয়েছিল বহু চর্চিত এই দুর্গাপুজো? কী ভাবেই বা রাধাগোবিন্দের বিগ্রহ স্থান পেয়েছিল ঐতিহ্যবাহী রায়চৌধুরী পরিবারে? উত্তর জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে অনেকটাই।

    স্বনামধন্য এই রায়চৌধুরী পরিবারের কম নামডাক ছিল না এক সময়ে। দু’ দু'টি বাড়ি। আর দু’টিতেই আরাধনা হত দেবী দুর্গার। প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন দালানে পূজিত হতেন দেবী। পুজোর এই ক’টা দিন গমগমে পরিবেশ। বাইরে থেকে বহু দর্শনার্থী যেমন প্রতিমা দর্শন করে যেতেন, তেমনই কেউ কেউ থেকেও যেতেন সেখানে। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে পুজোর আয়োজন, কোনও কিছুতেই যেন ত্রুটি নেই সেই বাড়ির। তবে কালের অতলে এক সময়ে সবই তলিয়ে যায়। দুর্গা দালান, পুজো সবই…

    এখানেই উঠে আসে সেই রাধাগোবিন্দ বিগ্রহের ইতিহাস। কথিত আছে, রায়চৌধুরী বাড়ির পূর্বপুরুষ রামনারায়ণ চৌধুরী স্বপ্নাদৃষ্ট হয়ে এক বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাধাগোবিন্দের বিগ্রহ আর অপর বাড়িতে অন্য আরেক পূর্বপুরুষ ইন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় লক্ষ্মীনারায়ণের মূর্তি।

    প্রচলিত আছে, রামনারায়ণ নাকি স্বপ্নে দেখেছিলেন ঈশ্বর তাঁকে জানান দিচ্ছেন, তিনি কলকাতার জগন্নাথ ঘাটে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। রোদ-ঝড়-জলে কষ্ট পাচ্ছেন তিনি। স্বপ্ন পেয়েই বিনা সময় ব্যায় রায়চৌধুরী মহাশয় পাথর নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করেন বাড়িতে।

    সেই পাথরের গায়ে নাকি একটি আবছা কৃষ্ণের মূর্তি আঁকা ছিল। ব্যস, তার পর আর কী, পাথর গেল বেনারসের কারিগরের নিপুণ হাতে। তৈরি হয়ে এল কৃষ্ণমূর্তি। আর তার পরেই বন্ধ হয়ে গেল দুর্গাপুজো। দীর্ঘ কয়েক দশক পর সেই রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোই আবার নতুন করে প্রাণ পেল কলকাতার দুর্গাবাড়িতে।

    পঞ্চমী থেকে শুরু হয়েছে পূজাচার। সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুজো প্রসঙ্গে বেশ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠেই সত্যম রায়চৌধুরী বলেন, “পুজোর ক’দিন আবার ভরে উঠছে ঠাকুর দালান। ঢাকের বাদ্যির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বাড়িময়।” ‘এ যেন অতীত ও বর্তমানের সেতুবন্ধন’- দীর্ঘ বছরের প্রাচীন এই দুর্গাপুজোকে এই ভাবেই ব্যাখ্যা করছেন তিনি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)