ক্যানিংয়ে শতাব্দীপ্রাচীন পুজো 'পোড়ামুখী'র, ভট্টাচার্য পরিবারে এ রূপেই পূজিতা হন মহিষাসুরমর্দিনী!
আনন্দবাজার | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শারদীয়ার সময়ে প্রত্যেক বছরই দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে কলকাতার পড়শি জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে, ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো দেখতে। জাঁকজমকে আজকালকার থিম পুজোগুলিকে টেক্কা দিতে না পারলেও শতাব্দীপ্রাচীন এই মাতৃ আরাধনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক অনবদ্য কিংবদন্তী। সবথেকে বড় কথা হল, মহামায়া এখানে পূজিতা হন 'পোড়ামুখী' রূপে!
হ্যাঁ। ঠিকই পড়ছেন। এই বাড়ির পুজোয় দশভূজার যে প্রতিমা পুজো করা হয়, তাঁর গাত্রবর্ণ ঝলসানো তামার মতো! এবং মায়ের সমগ্র মুখমণ্ডল ঘন কালো! ঠিক আগুনে চামড়া পুড়ে গেলে যেমন রং হয়, মা এখানে তেমন রূপেই আবির্ভূতা হন। যার নেপথ্যে রয়েছে বহু পুরনো এক কাহিনি বা ঘটনা!
ক্যানিংয়ের এই ভট্টাচার্য পরিবার আদতে ছিল অবিভক্ত বাংলায় ঢাকার বিক্রমপুর বাইনখাঁড়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁদের পারিবারিক পুজোর বয়স ৪৪১ বছর। কথিত, প্রাথমিক ভাবে এই পরিবারের মাতৃ প্রতিমার মুখমণ্ডল কালো বা গায়ের রং উজ্জ্বল তাম্রবর্ণ ছিল না। কিন্তু, পুজো প্রচলিত হওয়ার প্রায় শতাধিক বছর পরে একটি অঘটন ঘটে যায়।
বাড়ির দুর্গা দালানের পাশেই ছিল মা মনসার মন্দির। এক দিন পুরোহিত যখন মনসা পুজো সেরে দুর্গা পুজো করতে যাচ্ছেন, সেই সময়ে তিনি দেখেন একটি কাক মনসা মন্দিরের ঘিয়ের প্রদীপের জ্বলন্ত সলতে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে! কাকটির ঠোঁটে ধরা সেই সলতে দুর্গা দালানের শণের তৈরি চালের উপর পড়ে যায়। তাতেই ভস্মীভূত হয়ে যায় দুর্গা দালান। পুড়ে যায় দেবীর প্রতিমা!
ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা ভয়ে কাঁটা হয়ে পড়েন। তাঁরা আশঙ্কা করেন, মা হয়তো আর তাঁদের হাতে পুজো নিতে রাজি নন। তাই পরিবারের সদস্যরা পুজো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেই সময়েই পরিবারের কর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য স্বপ্নাদেশ পান। দেবী বলেন, তাঁর পুজো যেন বন্ধ করা না হয়। বরং, এ বার থেকে তিনি তাঁর ওই 'পোড়া মুখ' নিয়েই পুজো নেবেন বলে জানান! সেই ঘটনার পর থেকেই ভট্টাচার্য পরিবারে দশভূজা এই বিশেষ রূপে পূজিতা হন।
আগে এই পুজোয় পাঁঠা ও মহিষ বলি দেওয়ার প্রথা ছিল। কিন্তু, বর্তমানে সেই প্রথা প্রতীকী রূপে পালিত হয়। প্রাণীর বদলে ফল বলি দেওয়া হয়। প্রতি বছর জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর মাধ্যমে মায়ের আরাধনার নানা পর্যায় শুরু হয়। এই বাড়ির একচালা প্রতিমার আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল - গণেশ থাকেন দেবীর বাঁ দিকে এবং কার্তিকের অবস্থান দেবীর ডান পাশে।