পুজো মানেই যেন নতুনত্বের খোঁজে থাকে শহরের মানুষ। আর সেই খোঁজেই প্রতি বছর কোনও না কোনও মণ্ডপ নজর কেড়ে নেয়। এ বার ঠিক তেমনটাই ঘটাল তালতলা সর্বজনীন। তাঁদের পুজো আয়োজনে লেগেছে অসমের এক বিশেষ বাঁশের ছোঁয়া, যা কি না এই পুজোকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা।
মণ্ডপে ঢুকতে গিয়ে প্রথমেই থমকে দাঁড়াতে হবে। এ যেন কেবল বাঁশের কারুকাজ নয়, বরং সবুজ জীবনের এক ছন্দময় স্থাপত্য। পুজো কমিটির দাবি, এই বাঁশের প্যান্ডেল এর আগে কোথাও দেখা যায়নি। কারণটা আর কিছুই নয়, সেই দুর্লভ অসমিয়া মুলা বাঁশ। প্রতিটি বাঁশই যেন শিল্পীর হাতে তৈরি, একদম নিঁখুত, কোথাও এতটুকু বাঁকা বা অসমান নয়। প্রবেশ পথের এই ঋজুতা যেন জানান দেয়, এ পুজোয় কোনও ফাঁকি নেই, আছে কেবল কঠিন শিল্পের নিষ্ঠা।
মণ্ডপের ভেতরে ঢুকলে চোখ যায় আরও এক বিস্ময়ের দিকে— দেখা যাবে প্রকাণ্ড বাঁশের ঝাড়বাতি! ভাবা যায়? ইলেকট্রিক আলোর হাজারো ঝিলমিলের ভিড়ে এমন এক পরিবেশবান্ধব শিল্পকর্ম, যা মণ্ডপের কেন্দ্রকে আলোকিত করেছে তার নিজস্ব শান্ত মহিমায়। বাঁশ আর রঙিন আলোর জ্যামিতিক নকশা মিলে এক ‘আর্বান’ ধাঁধা তৈরি করেছে, যেখানে টিনের পাতের ব্যবহার মণ্ডপটিকে আধুনিকতার এক দারুণ আবহ দিয়েছে। দূর থেকে এই কাঠামোটিকে বহুতল ভবনের মতো দেখতে লাগতে পারে, কিন্তু কাছে এলেই বোঝা যায়, প্রতিটি বাঁশ যেন এক-একটি গল্পের বুনন।
প্রতিমা দাঁড়িয়ে আছে স্নিগ্ধ ভঙ্গিতে। চারপাশে বাঁশের সবুজ আভা। আলোর ছটায় পরিবেশটা হয়ে উঠেছে মায়াবী। ভিড় জমছে সকাল থেকেই। কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার বিস্ময়ে তাকিয়ে।
আসলে, তালতলা সর্বজনীন এই বছর পরম্পরা আর আধুনিকতাকে এক সুতোয় বেঁধেছে। তাদের প্রতিমাতেও সেই শান্ত, স্নিগ্ধ রূপ। বাঁশের সবুজাভ পটভূমিতে দেবীর এই কোমলতা যেন শান্তি আর স্থিতির বার্তা দেয়। চারপাশে রঙিন জ্যামিতিক ব্লক ও বাঁশের কারুকাজ।
শহরবাসীর ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি ভুলিয়ে এই বাঁশের কারুকার্য যেন এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনকে নিয়ে যায় অসমের সবুজ উপত্যকায়। পুজোর সাজে এমন রসবোধ আর মানবীয় স্পর্শ—সত্যিই তালতলা সর্বজনীন দেখাল, উৎসবের মূল আকর্ষণ এখনও থাকে শিল্প আর আবেগের বুননে।