• শিকড়ে ফিরিয়ে আনে অ্যাডিলেডের দুর্গাপুজো
    আনন্দবাজার | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • শারদ উৎসব মানেই উৎসবের এক অনাবিল আনন্দ, যা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি বাঙালির আবেগ ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। আর এই আবেগ শুধু দেশের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, দূর প্রবাসেও সমান উৎসাহে পালিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে বসবাসকারী বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছে দুর্গাপুজো তেমনই এক প্রাণের উৎসব।

    অ্যাডিলেডে চারটি দুর্গাপুজো হয়। এর মধ্যে দু’টি ভারতীয় ও বাংলাদেশি সমিতির উদ্‌যাপন এবং বাকি দু’টি ব্যক্তিগত উদযাপন। প্রথম পুজো শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, এক বাঙালি নাগরিকের ব্যক্তি প্রচেষ্টায়। এই পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম ‘বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন সাউথ অস্ট্রেলিয়া’-র মতো সংগঠনগুলি। প্রতি বছর, স্থানীয় কমিউনিটি হল বা সেন্টারে তিন থেকে চার দিনের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। এই পুজো প্রবাসে বাঙালি সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে।

    অ্যাডিলেডের পুজো অনেকটাই কলকাতার ঐতিহ্য মেনে চলার চেষ্টা করে। পঞ্জিকা অনুসারে দেবীর বোধন, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর পুজো হয়। ধুনুচি নাচ, আরতি, এবং পুষ্পাঞ্জলির সময় প্রবাসের ব্যস্ততা ভুলে সবাই মেতে ওঠেন এক নিবিড় আত্মীয়তায়। এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় প্রতিভারা নাচ, গান, নাটক এবং আবৃত্তির মাধ্যমে নিজেদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন। ছোটদের জন্য আয়োজন করা হয় নানা প্রতিযোগিতা। এ ছাড়া, বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু বাঙালি খাবার এবং ভোগের আয়োজন করা হয়, যা এই উৎসবকে আরও প্রাণবন্তকরে তোলে।

    পুজোর শেষ দিন, অর্থাৎ বিজয়া দশমীতে হয় সিঁদুর খেলা। এটি যেন আগামী বছরের জন্য অপেক্ষার এক মধুর সমাপ্তি। পরিবেশগত কারণে প্রবাসের পুজোয় সাধারণত প্রতিমা সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু পালন করা হয় বিসর্জনের সমস্ত আচার।

    অ্যাডিলেডের এই দুর্গাপুজো শুধু বাঙালি হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের নিজস্ব শিকড়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এবং বৃহত্তর অস্ট্রেলিয়ান সমাজে বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক সুন্দর উপস্থাপনা। এই আনন্দানুষ্ঠান অ্যাডিলেডের বুকে এক অন্য রকম উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)