শরৎ যখন তার স্নিগ্ধ হাওয়া আর সোনালি রঙে স্কটল্যান্ডকে ভরিয়ে তোলে, তখন এডিনবরা প্রস্তুতি নিচ্ছে এক অনন্য আয়োজনের— এডিনবরার দুর্গোৎসবের দ্বাদশ বর্ষপূর্তির। এক দশকেরও বেশি আগে ছোট্ট এক মিলনমেলা হিসেবে শুরু হলেও আজ এটি ব্রিটেনের অন্যতম প্রতীক্ষিত সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। দেশের বাইরে থাকা বাঙালিদের কাছে এই উৎসব শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; এটি আমাদের শিকড়ের টান, আমাদের পরিচয়ের উৎসব, আর ঐতিহ্যের সেই আনন্দঘন স্মরণ যা আমাদের একসূত্রে বেঁধে রাখে।
এই যাত্রার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ‘সাবাশ’, অর্থাৎ, স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলি আর্টস অ্যান্ড স্যাংস্কৃটিক হেরিটেজ’। এডিনবরার দুর্গোৎসবের কাহিনি আবেগ ও অধ্যবসায়ের। ২০১৪ সালে কিছু বন্ধু একত্রিত হয়েছিলেন, মনে করছিলেন ঢাকের শব্দ, শিউলির গন্ধ, আর মা দুর্গার স্নেহদৃষ্টিতে মিলনমেলার আনন্দ। সেই আকুলতা থেকেই এখানে পুজোর শুরু।
এই উৎসবের বিশেষত্ব হল মানুষকে একত্রিত করার ক্ষমতা। এটি শুধু বাঙালিদের জন্য নয়— যে কেউ এই সম্প্রদায়ের উষ্ণতা ও সংস্কৃতির ঐশ্বর্য অনুভব করতে চাইলে এটি তাঁরও উৎসব। বছরের পর বছর আমরা ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষ এবং স্কটিশ বন্ধুদের স্বাগত জানিয়েছি। ঢাকের তাল, ধুনুচি নাচের ছন্দ, পুষ্পাঞ্জলির গাম্ভীর্য, বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রাণচাঞ্চল্যে সবাই মেতে উঠেছে। অনেকের জন্য এটাই প্রথমবার বাঙালি ঐতিহ্যের সাথে পরিচয়, আর তাদের চোখের ঝিলিকই সব বলে দেয়।
এই বছর পুজোর দিনগুলোতে আমরা আশা করছি দু’হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী আসবেন। অনুষ্ঠানে থাকবে ঐতিহ্যবাহী পুজো-পার্বণ, হৃদয়স্পর্শী সঙ্গীত, নৃত্য পরিবেশনা এবং এমন এক রন্ধন উৎসব যা আপনাকে সরাসরি বাংলায় পৌঁছে দেবে। ঢাকের বাজনা থেকে সন্ধ্যারতির আলো, প্রতিটি মুহূর্ত ভরে উঠবে ভক্তি আর আনন্দে।