• “আবিষ্কারকদের যদি অপরাধীর মতো আচরণ করা হয়, তবে ভারত কীভাবে বিশ্বগুরু হবে?”...
    আজকাল | ০১ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: লাদাখের পরিবেশবিদ ও হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অল্টারনেটিভস লাদাখ (HIAL)-এর প্রতিষ্ঠাতা সোনম ওয়াংচুককে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (NSA)-এর আওতায় আটক করে গত সপ্তাহে যোধপুর জেলে পাঠানো হয়েছে। এই কঠোর পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আজ দিল্লির প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায় সরব হলেন তাঁর স্ত্রী ও HIAL-এর ডিরেক্টর গীতাঞ্জলি আংমো। তিনি প্রশ্ন তুললেন, “যে মানুষকে সরকারের মন্ত্রীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কৃত করেছেন, সেই মানুষটি হঠাৎ করেই কীভাবে ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ হয়ে গেলেন?”

    আংমো অভিযোগ করেন, ওয়াংচুকের বিদেশি যোগসাজশ ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনও প্রমাণ সরকার দিতে পারেনি। তিনি বলেন, “আমরা সব প্রমাণ, তথ্য ও নথি আদালতে পেশ করব। আমরা সেরা আইনব্যবস্থার মাধ্যমে লড়ব।”

    তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, HIAL-এর সৌর-তাপ প্রযুক্তি প্রকল্পকে কেন্দ্র সরকারই প্রথম পুরস্কৃত করেছিল। আইস-স্তূপা প্রকল্পও কেন্দ্রীয় আদিবাসী মন্ত্রক থেকে সম্মানিত হয়েছিল। আংমোর বক্তব্য, “যদি সোনম সত্যিই দেশদ্রোহী হতেন, তবে এই সরকারই কেন তাঁর কাজকে পুরস্কৃত করল? পুরস্কার দেওয়া মানুষ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কীভাবে হঠাৎ করে দেশবিরোধী হয়ে গেলেন?”

    আংমো জানিয়েছেন, HIAL ইতিমধ্যেই লাদাখে প্রায় ১.৮ লক্ষ বর্গফুট সৌর-তাপে গরম রাখা যায় এমন ভবন নির্মাণ করেছে, যার মধ্যে সেনাবাহিনীও ব্যবহার করছে। এসব ভবনের মাধ্যমে মাসে প্রায় ৪ হাজার টন কার্বন নিঃসরণ রোধ হচ্ছে। তিনি বলেন, “যখন বিশ্ব নেট-জিরো নিয়ে কথা বলছে, লাদাখ তখন নেট-পজিটিভ। অথচ এই কৃতিত্বের জন্য যিনি দায়ী, তাঁকেই অপরাধীর মতো জেলে পাঠানো হয়েছে। এভাবে আবিষ্কারকদের দমন করলে ভারত কীভাবে ‘বিশ্বগুরু’ হবে?”

    FCRA লাইসেন্স বাতিলের অভিযোগ নস্যাৎ করে আংমো জানান, তাঁদের সংগঠন কোনও বিদেশি অনুদান গ্রহণ করেনি। বরং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাঁদের গবেষণা কিনেছে এবং সেগুলি পরিষেবা চুক্তির আওতায়। তিনি দাবি করেন, “CBI নিজেই স্বীকার করেছে যে কোনও নিয়মভঙ্গ হয়নি। ভারতীয় গবেষণা বিদেশে মূল্যায়িত হচ্ছে, এটিই গর্বের বিষয়।”

    মন্ত্রকের অভিযোগ, এক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি ওয়াংচুকের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন। এ বিষয়ে আংমো বলেন, ওয়াংচুক জাতিসংঘ ও পাকিস্তানের Dawn মিডিয়ার যৌথ উদ্যোগে ইসলামাবাদে একটি জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “হিন্দুকুশ পর্বতমালা আটটি দেশে বিস্তৃত এবং দুইশো কোটি মানুষের জল সরবরাহ করে। এমন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়াটা কীভাবে অপরাধ হতে পারে? সেখানে আমার স্বামী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘Mission LIFE’-এরও প্রশংসা করেছিলেন।”

    আংমো অভিযোগ করেন, খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিয়ে গবেষণাকেও বিকৃত করে বলা হচ্ছে যে এটি ভারতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গ্রামীণ মানুষ কীভাবে আত্মনির্ভর হবে, সেই গবেষণাকেই জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে সাজানো হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ হাস্যকর।”

    সোনম ওয়াংচুক মাগসেসে পুরস্কারপ্রাপ্ত। আংমোর প্রশ্ন, “৬০ জন ভারতীয় এই পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২০ জন পদ্মবিভূষণও পেয়েছেন। তাহলে কি সরকার নিজেই দেশদ্রোহীদের পদ্মবিভূষণ দিচ্ছে?”

    ২৪ সেপ্টেম্বর লেহ-তে বিক্ষোভের সময় গুলিতে চার জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। এ বিষয়ে আংমো সরাসরি দায়ী করেন কেন্দ্রশাসিত লাদাখ প্রশাসনের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কাবিন্দর গুপ্ত ও ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ এস.ডি. জামওয়ালকে। তাঁর কথায়, “আমার স্বামী গান্ধীবাদী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তিনি কখনও হিংসার আশ্রয় নেননি। হিংসার জন্য দায়ী লাদাখ প্রশাসন।”

    লেহ শহরে টানা সপ্তম দিন জারি রয়েছে কারফিউ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গীতাঞ্জলি আংমোর অভিযোগ স্পষ্ট—লাদাখের দাবি ও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই সোনম ওয়াংচুককে “উইচ-হান্ট” করা হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে জবাবদিহি দাবি করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা সত্য প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না।”
  • Link to this news (আজকাল)