• বিজেপি নেতার বাড়ির পুজোর জমায়েতে কি ‘জমানা বদলের’ ছাপ? দলবদ্ধ হাজিরার প্রসঙ্গে গৃহকর্তার মন্তব্যে কোন ইঙ্গিত
    আনন্দবাজার | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • পুজোর সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচির পরিবর্তে নেতানেত্রীরা ব্যস্ত থাকেন জনতার সঙ্গে সংযোগে। তবে রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপিতে পুজোর সময়ে নেতার সঙ্গে নেতার সংযোগও হচ্ছে। গত চার বছর ধরে বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি পদে থেকেও যিনি দলের প্রায় কোনও কর্মসূচিতে ডাক পেতেন না, এ বছর তাঁর ডাকে তাঁর বাড়ির দুর্গাপুজোয় হাজির বিজেপির প্রায় গোটা প্রথম সারি। এ কি রাজ্য নেতৃত্বে ‘জমানা’ বদলের ইঙ্গিত? গৃহকর্তা রাজু (অনিন্দ্য) বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সবই মায়ের ইচ্ছা।’’

    মঙ্গলবার মহাষ্টমীতে রাজুর বাড়িতে গিয়েছিলেন বর্তমান ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ও রাহুল সিংহ। সপ্তমীতে গিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়, প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, প্রাক্তন সহ-সভাপতি রীতেশ তিওয়ারি (আপাতত দল থেকে বরখাস্ত)। এ ছাড়াও দলে এবং যুবমোর্চায় রাজ্য স্তরের পদাধিকারী ছিলেন, এমন একঝাঁক মুখ।

    ছ’বছর ধরে রাজুর বাড়িতে দুর্গাপুজো হচ্ছে। এ বছরের আমন্ত্রিতেরা আগেও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। প্রথম দিকে সকলে গেলেও গত দু’তিন বছরে ভিড় হাল্কা ছিল। ‘ওজনদার’ মুখের আনাগোনা কম ছিল। অনেকে নীরবে গিয়ে ‘বুড়ি ছুঁয়ে’ আসছিলেন। এ বছর সব আমন্ত্রিত হাজির হচ্ছেন পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একই সময়ে। দল বেঁধে ছবি তুলে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করছেন।

    ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি করা হয়েছিল সুকান্ত মজুমদারকে। সুকান্তের সঙ্গে রাজুর সরাসরি কোনও বিরোধ না থাকলেও সুকান্তের কমিটির সবচেয়ে ‘প্রভাবশালী’দের কয়েকজনের বিরুদ্ধে রাজু-সহ একঝাঁক নেতা প্রকাশ্যে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেন। সায়ন্তন, রীতেশ, জয়প্রকাশ মজুমদারেরা (তখন বিজেপিতে) সে তালিকায় ছিলেন। শান্তনু ঠাকুরের মতো প্রভাবশালী নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও তাঁদের সমর্থন করছিলেন। রীতেশ এবং জয়প্রকাশকে দল থেকে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ বরখাস্ত করা হয়। সায়ন্তনকে গুরুত্বহীন করে দেওয়া হয়। রাজু রাজ্য সহ-সভাপতি পদ পেলেও সব কর্মসূচি থেকে তাঁকে দূরে রাখা শুরু হয়। তাঁর বাড়ির পুজোর ভিড়েও তার প্রভাব পড়েছিল।

    জুলাইয়ে নতুন রাজ্য সভাপতি হয়েছেন শমীক। এখন তার ছাপ রাজুর পুজোয় পড়ছে। এক প্রাক্তন রাজ্য সহ-সভাপতির ব্যাখ্যা, ‘‘রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য দলের একাংশকে বার্তা দেওয়া যে, বিধিনিষেধের জমানা ফুরিয়েছে।’’

    পুজোর সময়ে বিজেপি নেতারা সাধারণত একত্রিত হন বিধাননগরের ইজ়েডসিসি চত্বরের পুজো বা তার উল্টো দিকে ‘ঐকতান’ চত্বরে বিধাননগরের বিজেপি কর্মীদের দ্বারা আয়োজিত আর একটি পুজোয়। রয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের কাছে আইনজীবী লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো বা উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষের বাড়ির পুজো। বিজেপির নেতানেত্রীরা সেখানে যাচ্ছেন। তবে যে যার মতো। কিন্তু রাজুর বাড়িতে যাচ্ছেন যোগাযোগ করে। এই সংযোগের পিছনে কোনও বিশেষ কারণের কথা অবশ্য কেউ মানতে চাননি। লকেটের বক্তব্য, ‘‘গত দু’বছর যেতে পারিনি। কারণ, এখানে ছিলাম না। তার আগে গিয়েছি। এ বার কলকাতায় আছি। তাই গেলাম।’’ রীতেশ জানাচ্ছেন, তিনি প্রতি বছরই যান। এ বার কেন প্রশ্ন উঠছে! আর রাজু হেসে বলছেন, ‘‘সকলেই মায়ের সন্তান। কে কখন কোথায় যাবেন, মা ঠিক করে রাখেন। মায়ের ইচ্ছা হয়েছে। সকলে দলবেঁধে এসেছেন।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)