• অসুরবধ থেকে দূরে, বৈষ্ণব ক্ষেত্র নবদ্বীপে মহিষাসুরমর্দিনী পূজিতা হন 'অভয়া মা' রূপে
    আনন্দবাজার | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বাংলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম নদিয়ার নবদ্বীপের 'অভয়া মা'-এর পুজো। পুজোর বয়স প্রায় ২৭৩ বছর। এখানে দ্বিভুজা দেবী দুর্গা ষোড়শী রূপে পূজিতা হন। সঙ্গে বালক রূপে মহাদেবও পুজো পান!

    প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে - মায়ের এই 'অভয়া' রূপ আদতে তাঁর ভক্তদের প্রতি সুরক্ষা বা নিরাপত্তা প্রদানের বার্তা বহন করে। সেই কারণেই মহিষাসুরমর্দিনী এখানে 'অভয়া মা'। আর, নেতাজি সুভাষ রোডের পাঁচ মাথার দক্ষিণ অঞ্চলে - যেখানে এই পুজো হয়, সেই স্থানকে বলা হয় 'অভয়া মা-তলা'।

    তথ্য বলছে, ১৭৫০ সাল নাগাদ এই এলাকায় মাটি খুঁড়ে মাত্র ৭ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩.৫ সেন্টিমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট একটি অতি ক্ষুদ্র ধাতব দেবীমূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। সেই মূর্তির ডান হাতে রয়েছে বরাভয় মুদ্রা আর বাঁ হাতে রহস্যময় ভগ্নাংশ! এ ছাড়া, দেবীর পাদদেশে সরীসৃপ জাতীয় একটি প্রাণীকে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সেটি গোধিকা বা গোসাপ হতে পারে!

    এই মূর্তি উদ্ধার হওয়ার পরে তৎকালীন সমাজের প্রধানরা শারদোৎসবে সেই মূর্তির কথা মাথায় রেখেই আলাদা করে দেবীর মাটির প্রতিমা গড়ে পুজো করার বিধান দেন। তখন থেকেই শুরু হয় অভয়া মায়ের পুজো। আজও স্থানীয় মুখোপাধ্য়ায় পরিবারে সারা বছর ধরে সেই প্রাচীন ধাতব মূর্তির পুজো হয় এবং দুর্গাপুজোর সময়ে অভয়া মা-তলার মন্দিরে আলাদা করে মৃন্ময়ী প্রতিমার আরাধনা করা হয়।

    মৃন্ময়ী এই প্রতিমাকে বসানো হয় সিংহাসনে। তিনি ষোড়শী। ডান হাতে বরাভয় মুদ্রা ও বাঁ হাতে ধরা এক উলঙ্গ বালকের হাত! বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই বালকই আসলে শিব! পুরাণ মতে, এক বার দেবাদিদেব মহাদেব সমানে ভগবতীর ধ্যান ভঙ্গ করার চেষ্টা করছিলেন। সেই চেষ্টায় সফল হতেই শেষমেশ তিনি বালক রূপে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান। তখন দেবী তাঁকে ডান হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন এবং বাঁ হাতে দিয়ে তাঁকে ধরে রাখেন। যাতে আর তিনি পালাতে না পারেন। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এই কারণেই দেবী 'অভয়া মা'।

    নবদ্বীপ শহরের অভয়া মা-তলার মন্দির ইতিমধ্যেই হেরিটেজ স্বীকৃতি পেয়েছে। সম্প্রতি নিত্যপুজোর জন্য মূল ধাতব মূর্তির আদলে এক পাথরের প্রতিমাও সেখানে স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এ বারও অভয়া মায়ের পুজো দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এসে ভিড় জমাচ্ছেন ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)