শিশু এবং প্রবীণদের সাহায্যে শহরের রাস্তায় ‘বন্ধু কলকাতা’, উৎসবে বড় উদ্যোগ লালবাজারের
প্রতিদিন | ০১ অক্টোবর ২০২৫
অর্ণব আইচ: কেঁদেই চলেছে শিশুটি। মা-বাবাকে যে খুঁজে পাচ্ছে না সে। ভিড়ের মধ্যে পুজো মণ্ডপে ঢুকতে গিয়েই কোনওভাবে হাত ছাড়িয়ে যায় তার। আর তার পরের মুহূর্তে বুঝতে পারে যে, হঠাৎ সে একা হয়ে গিয়েছে। আশপাশে পরিচিত কেউ নেই। তার হাত ধরলেন দু’জন। তাঁরা কেউ পরিচিত নন। কিন্তু মনে হল যেন কত আপন। বললেন, “আমরা পুলিশ আঙ্কেল আর আন্টি। তুমি হারিয়ে গিয়েছ, তাতে কী হয়েছে? একদম কান্না নয়। আমরা আছি যে। আমরাই তোমায় পৌঁছে দেব মা-বাবার কাছে।” তখন শিশুটির হাতে মুঠো ভর্তি চকোলেট। এই হারিয়ে যাওয়া শিশু আর প্রবীণদের খুঁজতে সারা শহরজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘বন্ধু কলকাতা’।
লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের মিসিং পারসনস স্কোয়াডের উদ্যোগে সারা শহর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ‘বন্ধু কলকাতা’র গাড়ি। এতদিন কলকাতা পুলিশের আওতায় ন’টি ডিভিশনে ‘বন্ধু কলকাতা’-র নয়টি গাড়ি বের হলেও এবার বাদ পড়ছে না কলকাতা পুলিশের নতুন ভাঙড় ডিভিশনও। এবার পুরো ভাঙড় এলাকাজুড়েও পুজোয় হারিয়ে যাওয়া শিশু আর প্রবীণদের খুঁজতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘বন্ধু কলকাতার’ এই গাড়ি। এর আগে বিকেল থেকে এই গাড়ি ঘুরে বেড়াত শহরে। কিন্তু এখন সকালেও যে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে উঠেছে মণ্ডপে মণ্ডপে। তাই এবার সকাল আটটা থেকেই প্রায় ভোররাত পর্যন্ত শহরে ঘুরছে হারিয়ে যাওয়া মানুষ খোঁজার গাড়ি।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, প্রত্যেকটি ‘বন্ধু কলকাতা’র গাড়িতে চালক ছাড়াও থাকছেন একজন অফিসার, একজন কনস্টেবল, একজন সিভিক ভলান্টিয়ার ও একটি স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার একজন সদস্য অথবা সদস্যা। যেহেতু নিখোঁজ হওয়া শিশু বা বালক-বালিকাদের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাই গাড়ির ভিতর থাকছে পর্যাপ্ত পরিমাণ চকোলেট, চিপস। মা-বাবাকে হারিয়ে কোনও শিশু বা বালক-বালিকা পেলে তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে চকোলেট, চিপস বা লোভনীয় খেলনা। এর পর নিখোঁজ শিশু বা প্রবীণের কাছ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে অভিভাবক বা নিকট আত্মীয়ের ফোন নম্বর জানার। যদি ফোন নম্বর না জানা যায়, তবে প্রত্যেকটি থানা বা যে মণ্ডপ থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেই পুজো উদ্যোক্তাদের এই নিখোঁজের ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হয়, যাতে অভিভাবকরা পুজো উদ্যোক্তা বা পুলিশের কাছে গেলেই শিশুটির খোঁজপান। এমনিতেই প্রায় প্রত্যেকটি থানায় চাইল্ড ফ্রেন্ডলি ঘর রয়েছে।
এ ছাড়াও ‘বন্ধু কলকাতা’-কে সাহায্য করার জন্যই কলকাতার ১০ টি প্রান্তে তৈরি হয়েছে বিশেষ দশটি পুলিশ কিয়স্ক। উত্তর ও কলকাতার বি কে পাল ক্রসিং, মধ্য কলকাতার গিরিশ পার্ক, দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী, গড়িয়াহাট, গড়িয়া মোড়, বেহালা চৌরাস্তা, খিদিরপুর, উল্টোডাঙা ও ভাঙড়ে এই দশটি কিয়স্ক রয়েছে। নিখোঁজদের যেমন এই কিয়স্কে এনে হাজির করা হচ্ছে, তেমনই অভিভাবক বা নিকটাত্মীয়রাও কিয়স্কে গিয়ে খোঁজখবর করলে, তাঁদের প্রিয়জনকে সেখানেই পুলিশ ‘বন্ধু কলকাতা’-র গাড়িতে করে নিয়ে আসছে। এ ছাড়াও এন্টালির পটারি রোডে চাইল্ড লাইনে থাকছে গাড়ি। আবার কোনও দর্শনার্থী ঠাকুর দেখতে গিয়ে যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করছে পুলিশই। কলকাতার ১৪টি বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স থাকছে। একই সঙ্গে থাকছে আরও ১৪টি ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স। ঠাকুর দর্শনার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।