আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঢাকের বোল, ধূপের গন্ধ আর আলোর রোশনাই- উৎসবের এই চেনা ছবির মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ায় একটি পুজোর মণ্ডপ তৈরি করেছে তীব্র বিতর্ক। শারদোৎসবের আবহে থিম পুজোর রমরমা সর্বত্র। কোথাও ফুটিয়ে তোলা হয় গ্রাম বাংলার সাবেকিয়ানা, কোথাও আবার হালের কোনও সামাজিক বিষয়। কিন্তু থিম পুজোর সেই দৌড়ে বাকি সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে দেওরিয়ার এই পুজো। এখানে দেবতা বা অসুরের চিরাচরিত কাহিনি নয়, মণ্ডপের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে দেশ কাঁপানো এক নৃশংস খুনের দৃশ্য। ‘নীল ড্রামওয়ালি’ নামের এই থিমকে ঘিরে এলাকাজুড়ে ছড়িয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য এবং বিতর্ক।
স্টেশন রোডের ‘মা শক্তি ক্লাব’-এর এই পুজো মণ্ডপে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে এক হাড়হিম করা দৃশ্য। মণ্ডপের ঠিক মাঝখানে রাখা একটি বড় নীল ড্রাম। তার ভিতর থেকে বেরিয়ে রয়েছে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত, নিথর দেহ। ড্রামের বাইরে হাতে খুনের অস্ত্র নিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক মহিলা ও এক পুরুষ, যারা ওই খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত। পাশেই পড়ে রয়েছে দুটি সিমেন্টের বস্তা। শুধু তাই নয়, ড্রামের গায়ে ভোজপুরি ভাষায় লেখা, ‘দো বোরা সিমেন্ট ড্রাম অউর লেবু কা হো’, যা সম্ভবত জনপ্রিয় ভোজপুরি গায়ক কেশরী লাল যাদবের একটি চটুল গানের পঙ্ক্তি। পুজোর আবহে এমন বীভৎস দৃশ্যের সঙ্গে এই গানের লাইন এক অদ্ভুত শ্লেষ তৈরি করেছে।
এই অভিনব অথচ বিতর্কিত থিমের নেপথ্যে কারণ কী? পুজো কমিটির সভাপতি প্রদীপ কুমার চৌরাসিয়া জানান, “এই থিমের একমাত্র উদ্দেশ্য হল অবৈধ সম্পর্কের ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করা। ক্ষণিকের মোহে মানুষ যে কত বড় ভুল করে ফেলতে পারে এবং তার পরিণাম যে কত মারাত্মক হতে পারে, সেই বার্তাই আমরা দিতে চেয়েছি।” তবে এই ‘সচেতনতা’র ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। উৎসবের আঙিনায় এমন নৃশংসতাকে তুলে ধরা কি আদৌ রুচিসম্মত? এই উদ্যোগ সচেতনতা প্রসারের বদলে অপরাধকে আরও বেশি করে জনপ্রিয় করে তুলছে না তো? মণ্ডপ চত্বরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এমন নানা তর্কবিতর্ক।
মণ্ডপে আসা দর্শনার্থীদের মধ্যেও দেখা গিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এক যুবক যেমন বললেন, “এই উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য। আগামী প্রজন্ম যখন এটা দেখবে, তখন তারা এ থেকে শিক্ষা নেবে।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ দর্শনার্থীর কথায়, “মা দুর্গার আবাহনের জায়গায় এমন বীভৎস দৃশ্য মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। ছোট ছেলেমেয়েরা কী শিখবে এ থেকে?”
উল্লেখ্য, যে ভয়ঙ্কর ঘটনা এই থিমের অনুপ্রেরণা, সেটি ঘটেছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে মিরাটে। প্রাক্তন মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতকে পূর্ব-পরিকল্পিত ছক কষে খুন করার অভিযোগ ওঠে তাঁর স্ত্রী মুসকান রাস্তগী ও তার প্রেমিক সাহিল- এর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সৌরভকে মাদক খাইয়ে বেহুঁশ করে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে তারা। এর পর প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহ খণ্ডবিখণ্ড করে মাথা ও হাত কেটে ফেলে এবং একটি নীল ড্রামে সিমেন্ট গুলে তার মধ্যে দেহটি লুকিয়ে দেয়। বর্তমানে মুসকান এবং সাহিল দু’জনেই জেল হেফাজতে রয়েছে। জানা গিয়েছে, জেলে থাকাকালীনই অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর মিলেছে মুসকানের।
সব মিলিয়ে, দেওরিয়ার এই ‘নীল ড্রামওয়ালি’ পুজো দেবী আবাহনের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের মনে একরাশ অস্বস্তি এবং কঠিন প্রশ্নও জাগিয়ে তুলেছে, যা হয়তো উৎসব ফুরোলেও সহজে মিটবে না।