ছবি ভাল হলে ‘পাশে দাঁড়ান’ বলতে হয় না, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’-এর সাফল্যে শুভ্রজিৎ
আনন্দবাজার | ০১ অক্টোবর ২০২৫
পুজোয় একদিন আগেপরে মুক্তি পেয়েছিল ‘রঘু ডাকাত’, ‘রক্তবীজ ২’, ‘দেবী চৌধুরাণী’ এবং ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’। প্রথম দুটো ছবি নিয়ে জল্পনা ছিল বেশি। বড় বাজেটের তারকাখচিত ছবি দুটোর প্রচারও হয়েছিল দেখার মতো। একই সঙ্গে ‘রঘু ডাকাত’ বনাম ‘রক্তবীজ ২’ কাজিয়া কোণঠাসা করে দিয়েছিল বাকি দুটো ছবিকে। ওই দু’টি ছবির পরিচালক-প্রযোজকেরা তাই দর্শকদের উপরেই ভরসা করেছিলেন।
দর্শক নিরাশ করেনি। খবর, মাত্রাতিরিক্ত প্রচার এবং কোনও রকম প্রতিযোগিতা ছাড়াই এগিয়ে চলেছে অনীক দত্ত এবং শুভ্রজিৎ মিত্রের ছবি। কমবয়সী এবং তরুণ প্রজন্ম তাঁর ছবি বেশি দেখছেন,আনন্দবাজার ডট কম-কে জানিয়েছেন অনীক। শুভ্রজিতের কথায়, “ভাল ছবি বানালে ‘পাশে দাঁড়ান’ বলে ভিক্ষা চাইতে হয় না। দর্শক এমনিই ছবি দেখতে আসেন।”
দুটো ছবির ভাগ্যই শুরু থেকে সুপ্রসন্ন ছিল না। ছবি বানাতে গিয়ে বারে বারে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন পরিচালক। তাঁর কথায়, “যতটা যত্ন নিয়ে ছবি বানাতে হত সেটা দিতে পারিনি।” তা ছাড়া, ছবিটি প্রায় আড়াই বছর ধরে মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। নায়ক হওয়া সত্ত্বেও ছবির প্রচারে যোগ দিতে পারেননি আবীর চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে, ছবি নিয়ে বাজে কথা বলছেন, আদতে ‘দেবী চৌধুরাণী’ তৈরি হবে না— এই ধরনের কটাক্ষ দিনের পর দিন সহ্য করতে হয়েছে শুভ্রজিৎকে।
তার পরেও ছবি এতটা ভাল ফল করবে, আশা করেননি অনীক। শুভ্রজিতের মতে, “আমি কোনও কিছুই গায়ে মাখিনি। আমার কাজ ছবি বানানো। মন দিয়ে সেটাই করেছি। দর্শকেরা বাকি কথা বলছেন।” ছবি প্রসঙ্গে ইতিবাচক রায় দিয়েছেন বিনোদিনী (সাবেক স্টার থিয়েটার)-এর কর্ণধার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, প্রিয়া প্রেক্ষাগৃহের মালিক অরিজিৎ দত্ত, পরিবেশক শতদীপ সাহা। জয়দীপ বলেছেন, “সপ্তমী থেকে ভাল ফল করছে ‘দেবী চৌধুরাণী’। পরপর টানা হাউসফুল বোর্ড ঝুলেছে আমার সিনেমা হলে। অনীকদার ছবিও খুবই ভাল ফল করেছে। এতটা আশা করিনি।” অরিজিৎ শহরের বাইরে। তাঁর প্রেক্ষাগৃহেও ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ ছবিটি দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখতে আসছেন। শতদীপের কথায়, “যতটা আশা ছিল তার থেকেও ভাল ফল করছে ছবি দুটো। এটা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক।”
কোন ম্যাজিকে ঘুরে দাঁড়াল প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়া ছবি দু’টি? ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’-এর প্রযোজক ফিরদৌসল হাসান বলেছেন, “আমাদের ছবি বাঙালিয়ানায় ভরপুর। কোনও দৃশ্য বা গানে অন্য রাজ্যের সংস্কৃতির ছায়া পড়েনি। পুজো বাঙালিদের। ফলে, দর্শক খুশি।” তিনি এও দেখেছেন, ছবির শেষে ‘টাইটেল কার্ড’-এর সঙ্গে বাজতে থাকা গানের তালে এক খুদে নেচে উঠেছে। এই স্বতঃস্ফূর্ততাই দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে টেনেছে। মুখে মুখে ছবির প্রচার ছড়িয়েছে। তাঁর মৃদু আক্ষেপ, ১০০টি প্রদর্শন সময় পেয়ে ৭০ শতাংশের উপরে প্রেক্ষাগৃহ ভরেছে। আর একটু বেশি প্রেক্ষাগৃহ বা প্রদর্শন সময় পেলে ছবিটি আরও ভাল ফল করত। শুভ্রজিতের মতে, গবেষণাধর্মী ছবি সবসময় দর্শককে টানে। তাঁর কাজও হয়তো এক শ্রেণির দর্শকের পছন্দ। সব মিলিয়ে তাই ছবির ফলাফল ভাল।