• 'আমাকে বাঁচান', আবেদন না শুনে পুলিশ ব্যস্ত 'গাড়ি ধোওয়া' দেখতে, থানার সামনেই কাতরাচ্ছেন রক্তাক্ত যুবক, ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয়রা
    আজকাল | ০২ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: পারিবারিক বিবাদ। আক্রান্ত আত্মীয়দের দ্বারা। পরিস্থিতি বিচারে, নিজের প্রাণ বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন পুলিশের কাছে। কাতর গলায় জানিয়েছিলেন, 'আমাকে বাঁচান'। অভিযোগ, পুলিশ সেসবে কর্ণপাতই করেনি। ওই পুলিশ স্টেশনের কর্তব্যরত পুলিশ উলটে ব্যস্ত ছিলেন নিজের গাড়ি ঠিকমতো ধোওয়া হচ্ছে কি না তা দেখতে। অভিযোগ, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য অপেক্ষা করতে করতেই, আরও কঠিন পরিস্থিতি হল যুবকের। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক হইচই।

    জানা গিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যপ্রদেশে। মধ্যপ্রদেশের ভিন্দ জেলার দাবোহ থানায় এই ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য, সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে। এর আগেও, ওই থানা নিয়ে আলোচনা হয়েছে নানাবিধ, ফের সংবাদ শিরোণামে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর, অভিযোগ শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা অবহেলা এবং অসংবেদনশীলতার চরম রূপ বলে অভিহিত করেছেন।

    অনেকেই আবার ঘটনাটি জানার পর, সমগ্র বিষয়টিকে 'এমপি আজব হ্যায়, সবসে গজব হ্যায়'-এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন। ঠিক কী ঘটেছে? জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দাবোহ থানার সীমানার আওতাধীন বারথারা গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় সূত্রের তথ্য, দীর্ঘদিন ধরেই পরিহার পরিবারের সদস্য-আত্মীয়দের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিল। মঙ্গলবার সেই বিবাদ জটিল আকার ধারণ করে। সম্পত্তি বিরোধ হিংসাত্মক রূপ নেয় আচমকা। জানা গিয়েছে, নারায়ণ পরিহার এবং কোমল পরিহার তাঁদের আত্মীয় শ্যামু পরিহারকে দেওয়াল তৈরির সময় কুড়াল এবং লাঠি দিয়ে আক্রমণ করেন। গুরুতর আহত হন শ্যামু নামের ওই ব্যক্তি। অভিযোগ, ঘটনাস্থলেই তাঁর প্রবল রক্তক্ষরণ শুরু হয়। 

    জানা গিয়েছে, প্রচুর রক্তক্ষরণের পর, শ্যামু পরিহারকে তাঁর ভাই রামু উদ্ধার করেন এবং তৎক্ষণাৎ জরুরি সাহায্য এবং সুরক্ষার জন্য তাঁকে থানায় নিয়ে যান। বিপত্তি ঘটে সেখানেই, অভিযোগ তেমনটাই। পরিহার পরিবারের অভিযোগ, গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, পুলিশ তাতে কর্ণপাতই করেনি।  তাঁকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তা বা দ্রুত অভিযোগ শুনে মামলা দায়েরের পরিবর্তে, কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিক ব্যস্ত ছিলেন গাড়ি ঠিকমতো ধোওয়া হচ্ছে কি না তা দেখতে। 

    প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, সাব-ইন্সপেক্টর রবীন্দ্র কুমার মাঝি-সহ পুলিশ কর্মীরা আহত ওই ব্যক্তির চিকিৎসার চেয়ে তাঁদের গাড়ি ধোয়ার ব্যাপারে বেশি চিন্তিত ছিলেন। যে সময় তাঁরা দাঁড়িয়ে গভীর মনযোগ দিয়ে গাড়ি পরিষ্কার দেখছিলেন, তখনই শ্যামু পরিহার থানার বাইরে ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। অভিযোগ, তাঁর দিকে দৃষ্টিপাতের সময় পাননি কেউই। 

    এক ঘন্টা অপেক্ষার পরেও, অভিযোগকারীর পরিবারের বারবার আবেদনের পরে, প্রথম তথ্য প্রতিবেদন (এফআইআর) নথিভুক্ত করা হয় বলে জানা গিয়েছে। ঘটনা অন্য মোড় নেয়, যখন অভিযোগ আসে, এফআইআর দায়েরের জন্য পুলিশ বিনিময়ে টাকা দাবি করেছিল। শ্যামুর পরিবার টাকা না দিতে চাওয়ায় এফআইআর-এ তাঁকেই উলটে অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ, অকারণ দেরী করানোয়, এবং অনৈতিক টাকা পয়সা নিয়ে টানাপোড়েনের কারণেই শারীরিক অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়ে পড়ে ওই ব্যক্তির।

    সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সূত্রে খবর, শ্যামু পরিহারের ভাই, রামু পরিহারের অভিযোগ, 'আমার ভাইকে বাঁচানোর পরিবর্তে, তাঁরা আমাদের সঙ্গে দর কষাকষি করছিলেন।' ন্যায়বিচারের জন্য তাঁরা সরাসরি পুলিশ সুপার অসিত যাদবের কাছে আবেদন করেছেন। অভিযোগের গুরুত্ব স্বীকার করে, ইনস্পেক্টর রাকেশ শর্মা বলেন, সাব ইন্সপেক্টরের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি হওয়া উচিত ছিল না। তবে, জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। স্থানীয়রা গোটা ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন। এই ঘটনাটিকে তাঁরা কেবল অবহেলা নয় বরং পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহারের বলেও উল্লেখ করেছেন। 

     
  • Link to this news (আজকাল)