আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে চলা বিক্ষোভ রক্তাক্ত আকার ধারণ করেছে। বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের মতো অশান্তি অব্যাহত থাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১২ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাকিস্তানি সেনারা দাদিয়াল, মুজাফফরাবাদ, রাওয়ালাকোট, নীলম ভ্যালি ও কোটলিতে ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করছে।
কীভাবে শুরু হল আন্দোলনপ্রতিবাদ শুরু হয় সরকারের প্রতি জনগণের ৩৮ দফা দাবি পূরণের ব্যর্থতা ঘিরে। ধীরে ধীরে এই আন্দোলন সামরিক বাহিনীর বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে বৃহত্তর গণআন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের নেতৃত্বে রয়েছে জম্মু কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি।
হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেপ্রতিবেদন অনুযায়ী, মুজাফফরাবাদে ৫ জন, ধীরকোটে ৫ জন এবং দাদিয়ালে ২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এছাড়া অন্তত তিনজন পুলিশও প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে, যাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি।
পাকিস্তান সরকারের দমননীতির অংশ হিসেবে হাজার হাজার সেনা অতিরিক্ত মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভ শুরুর পর থেকেই বাজার, দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে টানা বন্ধ রয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট এবং ল্যান্ডলাইন পরিষেবা। ফলে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।
বিক্ষোভকারীদের মূল দাবিআন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে পিওকের ১২টি আসন বাতিলের দাবি, যা বর্তমানে পাকিস্তানে বসবাসরত কাশ্মীরি শরণার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া কর মওকুফ, আটা ও বিদ্যুতের উপর ভর্তুকি, এবং দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করার দাবিও তুলছেন আন্দোলনকারীরা।সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে পুলিশের দিকে পাথর ছুঁড়ছেন এবং সেতুগুলিতে রাখা বিশাল কন্টেনার সরিয়ে দিচ্ছেন।
পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থির হওয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছেন, জনগণের দাবি আলোচনার মাধ্যমে মেটাতে সরকার প্রস্তুত। তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য একটি আলোচনাকারী কমিটি গঠনের কথাও জানিয়েছেন।
এদিকে, ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপল’স ন্যাশনাল পার্টির মুখপাত্র নাসির আজিজ খান জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৬০তম অধিবেশনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি সতর্ক করেছেন, পিওকে-তে মানবিক সংকট তৈরি হচ্ছে। তিনি সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে তাদের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
এই ঘটনা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ঘটছে। এর আগের সপ্তাহেই খাইবার পাখতুনখোয়ায় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৩০ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে চাপ তৈরি হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।
মাঠে-বাজারে এখন রক্তাক্ত সংঘর্ষ ও সামরিক কড়াকড়ি। জনগণের ন্যায্য দাবি পূরণের বদলে দমননীতিতে নামার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক চাপ ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে পাকিস্তানি সরকারের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী হবে, এখন সেটিই দেখার বিষয়।