বর্ষা বিদায় হলেও অক্টোবর জুড়ে চলবে বৃষ্টি, জানিয়ে দিল আইএমডি
আজকাল | ০২ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে যে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টি মরশুম শেষ হয়েছে। তবে মৌসুমি বায়ু এখনও পুরোপুরি দেশ থেকে সরে যায়নি। কারণ, বঙ্গোপসাগরে একের পর এক নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে পূর্ব, মধ্য ও পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টি নিয়ে আসছে। এই অবস্থায় অক্টোবর মাসেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টি ও রাতের তাপমাত্রা বেশি থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমডি।
১ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমি বৃষ্টিপাত ছিল দীর্ঘমেয়াদি গড়ের ১০৮ শতাংশ। এসময়ে গড়ে ৮৬৮.৬ মিমি বৃষ্টির বদলে বাস্তবে হয়েছে ৯৩৭.২ মিমি। এর মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারতে মৌসুমি বৃষ্টি স্বাভাবিকের তুলনায় ২৭.৩ শতাংশ বেশি হয়েছে—২০০১ সালের পর এটিই সর্বোচ্চ। একইসঙ্গে মধ্য ভারতে ১৫.১ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে অতিবৃষ্টির কারণে আগস্টের শেষ ভাগ ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা, ভূমিধস ও নদীভিত্তিক বন্যা দেখা দেয়।
অন্যদিকে, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত বৃষ্টির ঘাটতিতে ভুগেছে। এই অঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় ২০.৩ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে—১৯০১ সালের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। অরুণাচল প্রদেশ ও অসম-মেঘালয়, সঙ্গে বিহার—এই তিনটি আবহাওয়া উপবিভাগে ঘাটতি ছিল। বিশেষ করে মেঘালয় ৪৩ শতাংশ ঘাটতি নিয়ে দেশের সবচেয়ে শুষ্ক রাজ্য হয়েছে, যদিও সাধারণত এটি সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ। অরুণাচল প্রদেশেও ৪১ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে শুষ্ক রাজস্থান পেয়েছে ৬৪ শতাংশ অতিবৃষ্টি এবং কেন্দ্রশাসিত লাদাখ মৌসুমী বৃষ্টিতে রেকর্ড ৩৪২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি পেয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে বঙ্গোপসাগরে চারটি নিম্নচাপ তৈরি হয়, যার মধ্যে একটি ডিপ্রেশনে এবং আরেকটি ডিপ ডিপ্রেশনে পরিণত হয়েছিল। ফলে মাসজুড়ে ২৩ দিন নিম্নচাপ-জনিত বৃষ্টি হয়, যেখানে সাধারণত গড় থাকে ১২ দিন। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো-সাদৃশ্য কিন্তু তুলনামূলক শীতল অবস্থা এবং ভারত মহাসাগরে Madden-Julien Oscillation (MJO)-এর সক্রিয় পর্যায় দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত বাড়িয়ে দেয়।
এই মৌসুমে মোট ৬৯টি নিম্নচাপ-সৃষ্ট দিন রেকর্ড করা হয়, যা গড় ৫৫ দিনের তুলনায় অনেক বেশি। আইএমডি আরও জানিয়েছে, এবছর মৌসুমে কিছু বিশেষ আবহাওয়াজনিত ঘটনা ঘটেছে—যেমন ৩০ আগস্ট চেন্নাইয়ে বিরল ক্লাউডবার্স্ট, ১১–১৫ সেপ্টেম্বর তেলেঙ্গানায় চরম বৃষ্টি, ১৩–১৮ সেপ্টেম্বর উত্তরাখণ্ড-হিমাচলে অতিবৃষ্টি এবং ২২–২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় প্রায় ক্লাউডবার্স্টের মতো বৃষ্টি।
পশ্চিম রাজস্থান থেকে বর্ষা সরে যেতে শুরু করে ১৪ সেপ্টেম্বর, যা স্বাভাবিক সময়ের তিন দিন আগে। ১ অক্টোবরের মধ্যে বর্ষা উত্তর-পশ্চিম ভারতের অধিকাংশ জায়গা থেকে সরে যায়। তবে বঙ্গোপসাগরীয় নিম্নচাপ কার্যকলাপের কারণে পূর্ণ প্রত্যাহার বিলম্বিত হচ্ছে। সাধারণত ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বর্ষা সরে যায়। এর ফলেই অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমডি জানিয়েছে, অক্টোবর মাসে দেশজুড়ে বৃষ্টিপাত দীর্ঘমেয়াদি গড়ের ১১৫ শতাংশ হতে পারে।
অক্টোবরের মাঝামাঝি শুরু হওয়া উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বৃষ্টিপাত দক্ষিণ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইএমডি পূর্বাভাস দিয়েছে, এবছর এনইএম বৃষ্টি ১১২ শতাংশ হতে পারে। তামিলনাডু, উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ, রায়ালসীমা, কেরালা ও দক্ষিণ অভ্যন্তরীণ কর্নাটকে গড়ে ৩৩৪.১৩ মিমির তুলনায় বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া অক্টোবর-ডিসেম্বরে প্রশান্ত মহাসাগরে লা নিনো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ৭১ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে, যা এনইএম বৃষ্টিকে আরও বাড়াতে পারে।
অন্যদিকে, অক্টোবর মাসে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশে বেশি থাকতে পারে। তবে রাতের ন্যূনতম তাপমাত্রা প্রায় গোটা দেশেই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।