• ভারতের কোন রাজ্যে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক সবথেকে বেশি শক্তিশালী, জানলে অবাক হবেন...
    আজকাল | ০২ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ভারতের বৃহত্তম জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ শুধু জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক আয়তনেই নয়, দেশের সবচেয়ে বিস্তৃত রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অধিকারী হিসেবেও শীর্ষে রয়েছে। রাজ্যজুড়ে রয়েছে ১,২০০-রও বেশি রেলস্টেশন, যা দেশের অন্য যেকোনও রাজ্যের তুলনায় সর্বাধিক। এই সুবিশাল রেল কাঠামো উত্তরপ্রদেশকে ভারতের যোগাযোগ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির মেরুদণ্ডে পরিণত করেছে।

    প্রায় ২৪ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই বিশাল রাজ্যকে প্রতিদিন যাত্রী ও মালবাহী রেলের মাধ্যমে কার্যকরভাবে সংযুক্ত রাখার জন্য এত ঘন রেল নেটওয়ার্ক অপরিহার্য। রাজ্যের নগরকেন্দ্র, শিল্পাঞ্চল, কৃষিভিত্তিক এলাকা ও প্রত্যন্ত গ্রাম—সবকিছুকে একসূত্রে গেঁথেছে রেলপথ। যাত্রী চলাচল থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য ও শিল্পপণ্যের পরিবহণ—সব ক্ষেত্রেই রেল উত্তরপ্রদেশের প্রধান ভরসা।

    কেন্দ্র ও ভারতীয় রেলওয়ের ধারাবাহিক উদ্যোগে এই নেটওয়ার্ক আরও বিস্তৃত হয়েছে। ফলে বড় জংশন থেকে ছোট ছোট ‘হল্ট’ স্টেশন পর্যন্ত—প্রায় প্রতিটি প্রান্তই জাতীয় রেলওয়ে গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত।

    উত্তরপ্রদেশের একাধিক স্টেশন শুধু রাজ্যের নয়, দেশেরও অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ কেন্দ্র। এগুলি যাত্রী ও মালবাহী উভয় ক্ষেত্রেই বড় ভূমিকা রাখে।

    প্রয়াগরাজ জংশন (পূর্বে আলাহাবাদ জংশন)উত্তর ভারতের অন্যতম প্রধান স্টেশন, যা দিল্লি–হাওড়া ও জবলপুর–হাওড়া মূল লাইনের সংযোগস্থল। প্রতিদিন শত শত ট্রেন এখানে থামে। বিশেষ করে কুম্ভমেলার সময়ে মিলিয়ন মানুষকে পৌঁছে দিতে বিশেষ ট্রেন চালানো হয়, যা এই স্টেশনকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।

    কানপুর সেন্ট্রালভারতের শীর্ষ পাঁচ ব্যস্ততম স্টেশনের একটি, যেখানে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী চলাচল করেন। দিল্লি–হাওড়া রুটে অবস্থিত এই জংশন লখনউ, ঝাঁসি, বারাণসী ও পাটনার দিকে সংযোগের কেন্দ্র। বিশাল প্ল্যাটফর্ম, আধুনিক সুযোগসুবিধা ও একাধিক আন্তঃনগর ট্রেন পরিষেবার কারণে কানপুর সেন্ট্রাল দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলহাব।

    বারাণসী জংশনবিশ্বের প্রাচীনতম বসতিগুলির একটি শহরে অবস্থিত এই স্টেশন দেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক রাজধানী বারাণসীকে দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের সঙ্গে যুক্ত করে। ধর্মীয় পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী এই স্টেশন ব্যবহার করেন। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও গঙ্গার ঘাট পরিদর্শনের জন্য তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের কাছে এটি অপরিহার্য কেন্দ্র।

    উত্তরপ্রদেশে রেলপথ শুধু পরিবহণের মাধ্যম নয়; এটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি। কৃষিজ পণ্য দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছনো, শিল্পাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য পরিবহণ, শ্রমিক ও যাত্রীদের দৈনন্দিন যাতায়াত—সবই সম্ভব হয়েছে সুবিশাল এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। পাশাপাশি রেলস্টেশনগুলির চারপাশে গড়ে উঠেছে বাজার, হোটেল, ব্যবসা ও চাকরির অজস্র সুযোগ, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে।

    অতএব বলা যায়, উত্তরপ্রদেশের রেল নেটওয়ার্ক শুধু সংখ্যায় বৃহত্তম নয়, কার্যকারিতাতেও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। ১,২০০-রও বেশি স্টেশন রাজ্যটিকে ভারতের প্রতিটি প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত করেছে, যা একদিকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে, অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবাহকে নিরবচ্ছিন্ন রেখেছে।
  • Link to this news (আজকাল)