প্রতিমা বিসর্জনে গঙ্গার ঘাটে বাড়তি নজরদারি, জল ও আকাশপথে নজরদারি কলকাতা পুলিশের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০২ অক্টোবর ২০২৫
নবমী নিশি অতিবাহিত। নিয়ম মেনে আজ বিজয়া দশমী বিসর্জনের পালা। তবে বৃহস্পতিবার অধিকাংশ পুজোমণ্ডপে আজ সপরিবার থাকছেন মা উমা। শুক্রবার থেকে গঙ্গার ঘাটে বাড়বে বিসর্জনের চাপ। সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জন যাতে হয়, সেজন্য কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশ যৌথভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বৃহস্পতিবার থেকে ঘাটে নিযুক্ত রয়েছেন পুরসভার সাফাইকর্মীরা। বুধবার নবমীর দুপুরে পুর কমিশনার ধবল জৈন সব বিভাগের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে ঘাটের প্রস্তুতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।
প্রতিটি ঘাটে একজন করে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। বিসর্জন কাজে তদারকি করবেন তাঁরা। ঘাট চত্বরে থাকছে অ্যাম্বুল্যান্স। ঘাটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বিসর্জনের পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে কলকাতা পুলিশ। বাড়ি ও বারোয়ারি মিলিয়ে কলকাতায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুজো হয়। এর মধ্যে বাড়ির প্রায় ২৫০টি। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন হয়।
আজ, দশমীর ভিড় সামলানোর পাশাপাশি ঘাটে বিসর্জন পর্ব সামলাতে প্রস্তুত রয়েছে লালবাজার। ঘাটে আজ থেকে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকছে। গঙ্গায় টহল দেবে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ। ড্রোন দিয়ে আকাশপথে নজরদারি চালানো হবে। অতিরিক্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। জল পুলিশের দপ্তরে একটি রেসকিউ টিম রাখা থাকছে। পাঁচজন ডুবুরি থাকছে। বাজে কদমতলা ঘাটে একটি বিশেষ লঞ্চে থাকছেন ৬ জন ডুবুরি।
এছাড়াও বাগবাজার ঘাট, বাজে কদমতলা ঘাট, গোয়ালিয়র ঘাট ও নিমতলা ঘাটে মোতায়েন থাকছে ডিএমজির বিশেষ বাহিনী। নজরদারির জন্য সাতটি ঘাটে থাকছে ওয়াচ টাওয়ার। প্রত্যেকটি ঘাটে একজন করে ইন্সপেক্টরের আওতায় মোতায়েন থাকছে পুলিশের টিম। যার নজরদারি করবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও ডিসিরা। বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ঘাট সাফাইয়ের কাজে পুরসভার সঙ্গে সহযোগিতা করবে পুলিশও।
জোয়ারের সময়ও অনেক পুজো কমিটির লোকজন বিসর্জন দিতে নামেন। যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘাটে তাই মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে বিসর্জন প্রক্রিয়া সারতে এবারও জোয়ার-ভাটার সময় অ্যালার্ট দেওয়া হবে পুজো কমিটিগুলির মোবাইল ফোনে। নিমতলা, বাজেকদমতলা, গোয়ালিয়র ঘাট ও বিচালিঘাটে চারটি বোট থাকছে। জলে প্রতিমা ফেলার পর কাঠামোগুলি সরিয়ে ফেলা যায়। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য ডিসি কমব্যাটের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী টিম থাকছে।
কোনও পুজো কমিটি যাতে ডিজে না বাজায়, সেদিকে কড়া নজর রয়েছে পুলিশের। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কলকাতার ২৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ পিকেট থাকছে। কেউ যদি ডিজে বাজায় অথবা সেরকম কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে, সঙ্গে সঙ্গে সেই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে। আয়োজকদের গ্রেপ্তারও করা হতে পারে। নবমীর দিন পুর কর্তৃপক্ষ গিয়ে ঘাট পরিদর্শন করে এসেছে। বিসর্জনের আবর্জনা ভেসে এসে জলের পাইপলাইনের মুখ যাতে বন্ধ না হয়, সেদিকে নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ দপ্তর ও নমামি গঙ্গে প্রকল্পের আওতায় গঙ্গার দূষণ আটকাতে প্রতিটি ঘাটের দু’দিকে বাঁশের অস্থায়ী খাঁচা করা হয়েছে। বিসর্জনের আগে ফুল, বেলপাতা এবং অন্যান্য উপচার ঘাটের পাশে রাখার জন্য বসানো হয়েছে ডাস্টবিন।