• সরকারি চাকরি হারানোর ভয়, তিন দিনের চতুর্থ সন্তানকে জঙ্গলে ফেলে দিলেন শিক্ষক বাবা! কিন্তু রাখে হরি মারে কে...
    আজকাল | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: চতুর্থ সন্তান হওয়ায় খোয়া যেতে পারে সরকারি চাকরি! এই আতঙ্ক ক্রমশ গাঢ় হয়েছিল এক শিক্ষকের। তাই নবজাতককে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে পাথর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। সারারাত সেভাবেই জঙ্গলের মধ্যে পাথর চাপা অবস্থায় পড়েছিল তিনদিনের ছেলেটি। কিন্তু,এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে সে। এক গ্রামবাসী জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় নবজাতকের কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। এরপরই পাথর সরিয়ে নবজাতকটিকে উদ্ধার করেন। শিশুটির শিক্ষক বাবা বাবলু দান্ডোলিয়া ও মা রাজকুমারী দান্ডোলিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ ভারতীয় ন্যায়সংহিতার ১০৯ ধারায় (হত্যার চেষ্টা) মামলা রুজু করেছে।

    মর্মান্তিক এই ঘটনা মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারার। ঘটনা ঘটেছিল গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত বাবা বাবলু দান্ডোলিয়া রাজ্য সরকারের এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। ২০০৩ থেকেই বাবলু তৃতীয় শ্রেণির দায়িত্বে রয়েছেন। মধ্যপ্রদেশ সরকার নিয়ম করেছে যে, কোনও রাজ্য সরকারি কর্মীর দুইয়ের বেশি সন্তান হলে তিনি চাকরি খোয়াবেন। এই নিয়মেই ভয় পেয়েছিলেন বাবলি দান্ডোলিয়া। 

    পুলিশি জেরায় অভিযুক্থ শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী স্বীকার করেনছেন যে, তাঁদের আগেই তিন সন্তান আছে। তাদের বয় আট, ছয় ও তিন বছর। এরপর চতুর্থ সন্তানের জন্ম দেন তাঁরা। সরকারি নিয়মের ভয়ে বাবলু ও তাঁর স্ত্রী রাজকুমারী গর্ভধারণের খবর চেপে যেতে বাধ্য হন। এমনকী বাড়িতেই তাঁদের চতুর্থ সন্তানের জন্ম হয়। সেই সন্তান জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শতকষ্ট বুকে চেপে শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে জঙ্গলে ফেলে দিতে বাধ্য হন তিনি।

    ভোরে নন্দনওয়াড়ি গ্রামে প্রাতঃভ্রমণ করতে বেরিয়ে কয়েকজন কান্নার আওয়াজ শুনে প্রথমে ভেবেছিলেন কোনও পশু হবে। এর মধ্যে একজন কাছে যেতেই দেখেন, একটি পাথরের নিচে থেকে হাত-পা ছটফট করছে রক্তাক্ত এক শিশু। পিঁপড়ে কামড়ে দিয়েছে নবজাতককে। দ্রুত শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

    ছিন্দওয়ারা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন যে, শিশুটির পিঁপড়ার কামড় এবং শীতজনিত হাইপোথার্মিয়ার লক্ষণ রয়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কথায়, "শিশুটির বেঁচে থাকা অলৌকিক কিছু না।" নবজাতকটি এখন নিরাপদ এবং চিকিৎসা তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

    পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৯৩ নম্বর ধারায় শিশু পরিত্যাগের মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত শেষে ১০৯ ধারা (খুনের চেষ্টা) যোগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন এসডিওপি কল্যাণী বরকড়ে।

    ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুসারে, ভারতে পরিত্যক্ত নবজাতকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মধ্যপ্রদেশে। দারিদ্র্য, সামাজিক কলঙ্ক এবং চাকরি-সম্পর্কিত ভয় এই ধরনের অনেক ঘটনার কারণ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এই ঘটনাটি বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ এটা ঘটিয়েছে একটি শিক্ষিত পরিবার।
  • Link to this news (আজকাল)