• এবার পুলিশের জালে দিল্লি-বাবার তিন সঙ্গিনী! স্বীকার করলেন ছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে চাপ দেওয়ার অভিযোগ ...
    আজকাল | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্বঘোষিত গডম্যান দিল্লির চৈতন্যানন্দ সরস্বতী ওরফে পার্থসারথীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার মামলায় এবার গ্রেফতার হলেন তাঁর তিন ঘনিষ্ঠ মহিলা সহযোগী। পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় তাঁরা স্বীকার করেছেন যে, বাবার নির্দেশে তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখিয়ে, নানা অজুহাতে তাঁর কাছে যেতে বাধ্য করতেন এবং প্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করতেন।

    গ্রেফতার হওয়া তিনজন -শ্বেতা শর্মা (অ্যাসোসিয়েট ডিন), ভাবনা কপিল (এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর) এবং কাজল (সিনিয়র ফ্যাকাল্টি)। এঁদের বিরুদ্ধে হেনস্থায় সহযোগিতা, ভয় দেখানো ও প্রমাণ নষ্ট করার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

    দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে শ্রী সারদা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকা অবস্থাতেই গত আগস্টে চৈতন্যানন্দের বিরুদ্ধে অন্তত ১৭ জন ছাত্রী যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন। সেই মামলায় গত রবিবার ভোরে আগ্রার একটি হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬২ বছরের এই স্বঘোষিত ধর্মগুরুর আচরণে কোনও অনুতাপের ছাপ নেই। তাঁর কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, একটি আইপ্যাড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একটি ফোন থেকেই ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাস ও হোস্টেলের সিসিটিভি ফুটেজে প্রবেশাধিকার মিলত। ফোনের তথ্য ঘেঁটে পুলিশ জানিয়েছে, মহিলা ছাত্রছাত্রীদের যোগাসনের ছবিতে কুরুচিকর মন্তব্য করতেন তিনি।

    চৈতন্যানন্দের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও স্থায়ী আমানত মিলিয়ে প্রায় আট কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বাজেয়াপ্ত করেছে প্রশাসন।

    চৈতন্যানন্দ চলতি বছর জুলাই মাস থেকে বিদেশে ছিলেন, ৬ আগস্ট ভারতে ফিরে আসেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর, তাঁকে দেশ ত্যাগ করতে বাধা দেওয়ার জন্য একটি লুকআউট সার্কুলার জারি করা হয়েছিল। তিনি গ্রেপ্তারি এড়াতে বৃন্দাবন, মথুরা এবং আগ্রার নানা জায়গায় গা ঢাকা দিচ্ছিলেন।  যাতায়াতের জন্য ট্যাক্সি ব্যবহার করতেন এবং কমদামী হোটেলে থাকতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

    এফআইআর অনুসারে, স্বঘোষিত ধর্মগুরু প্রথমে গভীর রাতে ছাত্রীদের তাঁর আবাসনে যেতে বাধ্য করতেন, নির্দিষ্ট সময়ে অনুপযুক্ত বার্তা পাঠাতেন এবং সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতেন। অভিযোগ, তিনি এবং তাঁর সহযোগিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে সহযোগিতা আদায়ের দাবি করেছিলেন।

    ইনস্টিটিউটের একজন প্রাক্তন ছাত্রী এনডিটিভিকে জানিয়েছেন যে, চৈতন্যানন্দ কমপক্ষে নয়'বছর ধরে ছাত্রীদের হয়রানি করে আসছিলেন। তিনি দাবি করেন যে, তিনি তাঁদের ফোন কেড়ে নিতেন এবং অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা-সহ পৃথক কক্ষে রাখতেন। ২০১৬ সালে দু'বছরের একটি কোর্সে ভর্তি হওয়া এই ছাত্রী বলেন, "ছাত্রীদের ফোন কেড়ে নেওয়া হত এবং ব্ল্যাকবেরি-অ্যাপলের মতো দামি ফোন দেওয়া হত, যাতে সে সেগুলিতে অ্যাক্সেস পেতে পারে এবং চ্যাট এবং বার্তা মুছে ফেলা যায়। ছাত্রীদের তাঁদের পরিবার এবং আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছিল," 

    অভিযোগকারী এই ছাত্রীর অভিযোগ, ২০১৬ সালে ওই ছাত্রীর এক সহপাঠীকে টার্গেট করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ। তাঁকে বলা হয়েছিল বিদেশে বা মথুরায় ইন্টার্নশিপে পাঠানো হবে। সন্দেহ হওয়ায় ওই ছাত্রী কয়েক দিনের মধ্যেই ইনস্টিটিউট ছেড়ে দেন। তাঁর কথায়, "প্রথমে, সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু তারপর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে- আমার ওই বন্ধুকে ইন্টার্নশিপের জন্য বিদেশে এবং মথুরায় পাঠানো হবে। কেবল একজনকে পাঠানো হচ্ছে? আমি কখনও এমন কিছু শুনিনি। সে কিছু ভুল সন্দেহ করেছিল এবং বলা হয়েছিল যে তাঁকে তিন দিনের মধ্যে চলে যেতে হবে। তারপর সে ইনস্টিটিউট ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, এবং আমি তাঁকে তা করতে সাহায্য করি।"  

    প্রাক্তন এক ছাত্রের কথায়, প্রায় ন’বছর ধরেই ছাত্রীদের হেনস্থা করতেন চৈতন্যানন্দ। তাঁদের ফোন কেড়ে নিয়ে আলাদা কক্ষে রাখতেন। পরিবর্তে দামী ফোন (ব্ল্যাকবেরি, অ্যাপল) দেওয়া হত, যাতে বাবার অনুগামীরা মেসেজ ও চ্যাট মুছে ফেলতে পারে। পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বাধা দেওয়া হত।

    এখন পর্যন্ত এই মামলায় অন্তত ৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চৈতন্যানন্দের তিন মহিলা সহযোগীকে পাকড়াও করার পর তদন্তে আরও বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
  • Link to this news (আজকাল)