আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার ছত্তিশগড়ের বিজাপুর জেলায় ১০৩ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪৯ জনের মাথার দাম ছিল এক কোটি টাকারও বেশি।
আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের মধ্যে ২২ জন মহিলা। এঁরা সকলে মাওবাদী আদর্শের প্রতি আস্থা হারিয়ে 'মূল স্রোতে' ফিরতে চেয়েছেন। একই দাবি করেছে সিআরপিএফ-ও।
বিজাপুরের জেলা পুলিশ সুপার জিতেন্দ্রকুমার যাদব বলেন, "২২ জন মহিলা-সহ ১০৩ জন মাওবাদী মতাদর্শকে ফাঁপা বলে মনে করেছেন। তাঁরা নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-এর সঙ্গে মতপার্থক্য এবং নেতাদের কাজে হতাশা ব্যক্ত করে পুলিশ এবং সিআরপিএফের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।" এছাড়া জানানো হয়েছে যে, বস্তার অঞ্চলে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা দেখে মুগ্ধ হয়েই আত্মসমর্পণকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহের পথ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ছত্তিশগড়ে একদিনে একসঙ্গে এত জন মাওবাদী এই প্রথম আত্মসমর্পণ করলেন বলে করেছেন সে রাজ্যের পুলিশ।
সরকারের পুনর্বাসন নীতির শর্তাবলী মাওবাদীদের হিংসার পথ ছাড়তে উৎসাহিত করছে বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার জিতেন্দ্রকুমার যাদবের কথায়, "পুনা মার্গেম (সামাজিক পুনর্মিলনের জন্য পুনর্বাসন) - মাওবাদীদের জন্য বস্তার রেঞ্জ পুলিশ চালু করা একটি পুনর্বাসন উদ্যোগ, প্রত্যন্ত গ্রামে উন্নয়নমূলক কাজ সহজতর করার লক্ষ্যে ছত্তিশগড় সরকারের 'নিয়াদ নেল্লানার' (আপনার ভাল গ্রাম) প্রকল্প। রাজ্য প্রশাসনের নতুন আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন নীতি দ্বারা আত্মসমপ্রণকারীরা বিশেষভাবে মুগ্ধ হয়েছেন। ফলে তাঁরা সশস্ত্র বিপ্লবের পথ পরিহার করেছেন।"
আত্মসমপ্রণকারী মাওবাদীদের মধ্যে রয়েছেন সংগঠনের বিভাগীয় কমিটির সদস্য লাচ্চু পুনেম ওরফে সন্তোষ (৩৬), গুড্ডু ফারসা (৩০), ভীমা সোধি (৪৫), হিদমে ফারসা (২৬) এবং সুখমতি ওয়াম (২৭), সকল প্লাটুন পার্টি কমিটির সদস্য, প্রত্যেকের জন্য আট লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। অন্যদের মধ্যে, চারজন মাওবাদীর জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা, ১৫ জন ক্যাডারের জন্য দু'লক্ষ টাকা, দশজন ক্যাডারের জন্য এক লক্ষ টাকা, ১২ জন ক্যাডারের জন্য ৫০,০০০ টাকা এবং তিনজন ক্যাডারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, প্রত্যেককে ১০,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে।
আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আরপিসি (রেভলিউশনারি পার্টি কমিটি) মাওবাদীদের সংখ্যা বেশি। সাম্প্রতিক অতীতে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বেশ কয়েকজন মাওবাদী নেতা নিহত হওয়ায় অথবা আত্মসমর্পণ করার পর এরা বামপন্থী চরমপন্থী আন্দোলন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দাবি পুলিশ সুপার যাদবের।
এসপি জানান, এই বছর এ পর্যন্ত বিজাপুর জেলায় ৪১০ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন, এবং আরও ৪২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, "সরকারের পুনর্বাসন নীতির শর্তাবলী মাওবাদীদের হিংসা ত্যাগ করতে উৎসাহিত করছে। আত্মসমর্পণকারীদের পরিবারও চায় যে, তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক এবং সমাজের মূল স্রোতে থাকুন।"
সকল আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০,০০০ টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে এবং সরকারের নীতি অনুসারে তাঁদের পুনর্বাসন করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।