• দশমীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ! কলকাতার ঘাটগুলিতে প্রতিমা নিরঞ্জনে বিপর্যয় মোকাবিলা দলের বন্দোবস্ত করল পুরসভা
    আনন্দবাজার | ০২ অক্টোবর ২০২৫
  • বিজয়াদশমী বৃহস্পতিবার। মহানবমীর রাত থেকেই কলকাতা শহরে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। নিম্নচাপের প্রভাব রয়েছে দশমীর দুপুরেও। বৃষ্টির জেরে পরিস্থিতি কিছুটা প্রতিকূল হলেও, কলকাতায় প্রতিমা বিসর্জন নির্বিঘ্ন করতে কড়া প্রস্তুতি নিয়েছে পুরসভা এবং প্রশাসন। বড় বারোয়ারি পুজোগুলির প্রতিমা যদিও পরবর্তী দিনগুলিতে নিরঞ্জন করা হয়। তবে বাড়ির এবং ছোট পুজোর প্রতিমা দশমীতেই বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। দুপুর গড়াতেই কলকাতার গঙ্গার ঘাটগুলিতে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে প্রতিমা নিরঞ্জনকে ঘিরে।

    দশমীর দুপুরে বাজে কদমতলা ঘাট পরিদর্শনে যান কলকাতা পুরসভার মেয়র-পরিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার। সেখানে পুরসভা ও পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে তিনি ঘাটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। বৃষ্টির মধ্যে কী ভাবে বিসর্জন হবে, তা নিয়েও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। পরে দেবাশিস বলেন, ‘‘পুরসভা সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলও প্রস্তুত রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও যাতে প্রতিমা বিসর্জনে অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে আমাদের বিশেষ নজর আছে।’’

    ঘাটগুলিতে নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাগবাজার, বাজে কদমতলা, গোয়ালিয়র ও নিমতলা ঘাটে মোতায়েন রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। সাতটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে তৈরি হয়েছে নজর মিনার (ওয়াচ টাওয়ার), যেখান থেকে চলবে টানা নজরদারি। প্রতিটি ঘাটে এক একটি পুলিশ দল মোতায়েন থাকবে, নেতৃত্ব দেবেন ডিসি, এসি এবং ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিকেরা।

    প্রসঙ্গত, নবমীর বিকেলেই কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিভিন্ন বিসর্জন ঘাট ঘুরে দেখেন। দুর্যোগের আশঙ্কা মাথায় রেখে নবমীর দুপুরেই পুর কমিশনার ধবল জৈনের নেতৃত্বে জরুরি বৈঠকও হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে এক জন করে এগ্‌জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দায়িত্বে থাকবেন। বিসর্জনের সময় সার্বিক তদারকি করবেন তাঁরা। পাশাপাশি, ঘাটচত্বরে থাকবেন সাফাইকর্মীরা। প্রতিটি ঘাটে আলো, অ্যাম্বুল্যান্স ও জরুরি পরিষেবার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

    শহর ও শহরতলিতে এ বছর মোট প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুজোর আয়োজন হয়েছে, যার মধ্যে বাড়ির পুজো প্রায় আড়াইশো। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে সবচেয়ে বেশি বিসর্জন হয়। তাই এ সব জায়গায় বিশেষ নজর দিয়েছে পুলিশ ও পুরসভা। লালবাজারের তরফে জানানো হয়েছে, ঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। গঙ্গায় টহল দেবে রিভার ট্রাফিক পুলিশ। নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোন ও অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা। জলপুলিশের ‘রেসকিউ টিমে’ রাখা হয়েছে পাঁচ জন ডুবুরি, পাশাপাশি বাজে কদমতলা ঘাটে বিশেষ লঞ্চে আরও ছয় জন ডুবুরি মোতায়েন থাকবেন।

    দুর্যোগে দুর্ঘটনা এড়াতে নিয়মিত মাইক প্রচার চলছে ঘাটে। পুজো কমিটিগুলিকে এসএমএসে জোয়ার-ভাটার তথ্য পাঠানো হচ্ছে। কারণ, জোয়ারের সময় বিসর্জনে ঝুঁকি থাকে। চারটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে রাখা হয়েছে বোট, যাতে প্রতিমা জলে নামার পর কাঠামো দ্রুত সরানো যায়। ডিসি (কমব্যাট)-এর নেতৃত্বে বিশেষ উদ্ধারকারী দলও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

    এ ছাড়া, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে বাজানো নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। নির্দেশ অমান্য করলে সঙ্গে সঙ্গে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমনকি আয়োজকদের গ্রেফতারও করা হতে পারে। শহরের ২৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ পিকেট মোতায়েন করা হয়েছে। গঙ্গাদূষণ রোধে পুরসভা ও পরিবেশ দফতরের যৌথ উদ্যোগে ঘাটে নেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যবস্থা। ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি ঘাটে বাঁশের অস্থায়ী খাঁচা বসানো হয়েছে, যাতে প্রতিমার কাঠামো ও উপচারে ব্যবহৃত ফুল, বেলপাতা, ধূপ, প্রসাদ ইত্যাদি আলাদা করে সংগ্রহ করা যায়। ডাস্টবিনও বসানো হয়েছে।

    সব মিলিয়ে, আবহাওয়ার প্রতিকূলতা সত্ত্বেও মা দুর্গার বিদায়ের দিন শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল ভাবে বিসর্জন সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও পুরসভা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)