রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের প্রধান কর্তাদের নিয়োগ নিয়ে রাজ্য বনাম কমিশন টানাপড়েন চলছে দীর্ঘ দিন। শেষ পর্যন্ত দু’টি স্তরের আধিকারিক নিয়োগে রাজ্যের পাঠানো নামের মধ্যে থেকে এক জন করে বেছে নিলেও, তৃতীয় একটি পদে নিয়োগের প্রশ্নে নতুন করে নামের তালিকা চেয়ে পাঠাল জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের বক্তব্য, ওই পদের জন্য যে আধিকারিকদের নাম রাজ্য প্রস্তাব করেছিল, তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না বলেই ফের নতুন নামের তালিকা চাওয়া হচ্ছে। বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, নির্বাচনী কাজে এই পদের গুরুত্ব অনেক। ফলে সব দিক খতিয়ে দেখে নিয়োগ দিতে চাইছে দিল্লির নির্বাচন সদন। কমিশনের এই অবস্থানের কারণে রাজ্যের সঙ্গে ফের টানাপড়েন শুরু হবে কি না, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরে।
দীর্ঘ দিন ধরেই সিইও দফতরে একাধিক পদ ফাঁকা। দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরুর আগে সেই সব পদ পূরণ করা জরুরি। তাই অতিরিক্ত সিইও, যুগ্ম সিইও এবং ডেপুটি সিইও পদে নিয়োগের লক্ষ্যে রাজ্যের থেকে যোগ্য আধিকারিকদের নামের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিল কমিশন। প্রথম যে তালিকা রাজ্য পাঠিয়েছিল, তা বাতিল করে দেয় দিল্লির নির্বাচন সদন। দ্বিতীয় বার পাঠানো তালিকায় প্রথম দু’টি পদের জন্য নদিয়ার জেলাশাসক-সহ ছ’জন আইএএস অফিসারের নাম প্রস্তাব করে নবান্ন। শেষ পদের জন্য প্রস্তাব ছিল তিন জন ডব্লিউবিসিএস আধিকারিকের নাম।
সম্প্রতি লিখিত ভাবে কমিশন জানিয়েছে, অতিরিক্ত সিইও পদে নদিয়ার জেলাশাসক অরুণ প্রসাদের নাম গ্রহণ করা হয়েছে। যুগ্ম সিইও পদে হরিশঙ্কর পানিক্কারকে নিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু ডেপুটি সিইও পদের জন্য পাঠানো নামগুলি বাতিল করে নতুন নাম দিতে বলা হয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, যে আধিকারিকদের নির্বাচনের কাজে নিয়োগ করা হবে, তাঁদের সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য জেনেই পদক্ষেপ করছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট মহলের অনুমান, প্রশাসনের একাংশের ভূমিকা এবং শাসক দলের হয়ে কাজ করার অভিযোগে বারবারই সরব হন বিরোধীরা। আধিকারিক বাছাইয়ের প্রশ্নে সেই দিকগুলিও বিবেচনায় থাকতে পারে। আবার ভোটার তালিকায় অসাধু হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ আধিকারিকদের একাংশের বিরুদ্ধে উঠেছিল, বিবেচনায় থাকতে পারে তা-ও।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের চার আধিকারিককে এমন অভিযোগে নিলম্বিত করা হয়েছে। চলছে শৃঙ্খলাভঙ্গের বিভাগীয় তদন্তও। অবশ্য আধিকারিক নিয়োগ সংক্রান্ত লিখিত বার্তায় কমিশন জানিয়েছে, ডেপুটি সিইও পদে তাঁদের নামই প্রস্তাব করতে হবে, যাঁদের নির্বাচনী কাজে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। নদিয়ার জেলাশাসক সিইও অফিসে বদলি হওয়ায় ২০১৬ সালের ব্যাচের আইএএস অনীশ দাশগুপ্তকে নতুন জেলাশাসক করা হয়েছে।