গোটা পশ্চিমবঙ্গ যখন দুর্গোৎসবের মেজাজে, তখন চুপিসারে নিজেদের রাজনৈতিক প্রস্তুতি শুরু করে দিল বঙ্গ বিজেপি। বাংলাদেশ-পরবর্তী ঘটনায় বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হিন্দু জনগণের মধ্যে যে ‘মুসলিম ভীতি’র সঞ্চার হয়েছে বলে বিজেপি দাবি করে, সেই বিষয়টিকে পোক্ত করতে এবং সেই সঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে গুরুত্ব দিতে সীমান্তবর্তী এলাকায় কর্মিসভা করতে চলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
অনুপ্রবেশ, জনবন্যাসের বদল নিয়ে বিজেপি এখন নতুন করে সক্রিয়। সম্প্রতি বঙ্গ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বিষয়টি নিয়ে উচ্চ স্বরে সরব হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্মেলন উপলক্ষে মোদীর সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সেই সময়ে শমীকের সঙ্গে একান্তে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা হয় তাঁর। সূত্রের খবর, বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকা সম্পর্কে শমীকের কাছে তথ্য এবং রাজনৈতিক অবস্থার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছিলেন রাজনাথ। তিনিও শমীককে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার পরেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই উদ্যোগ কি না, সেই প্রশ্নে কৌতূহল রয়েছে গেরুয়া শিবিরের অভ্যন্তরে।
সূত্রের খবর, সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে এক বা একাধিক কর্মিসভা করবেন শমীক। মূল বক্তব্য, সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে দলীয় কর্মীদের গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে। কে আসছেন, কার বাড়িতে আসছেন, কোথা থেকে আসছেন, সেই সব তথ্য জোগাড় করতে হবে। প্রয়োজন মতো সেই তথ্য জেলা নেতৃত্বের মাধ্যমে রাজ্য দফতরে পাঠানো হবে। রাজ্য দফতর থেকে ‘সন্দেহজনক গতিবিধি’ মনে হলে তা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির নজরে আনা হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রত্যেক দলীয় কর্মীকে ‘পাহারাদারে’র ভূমিকা পালন করতে বলছে বিজেপি।
এর সঙ্গেই থাকছে এসআইআর-এর বিষয়টি। সূত্রের খবর, কর্মিসভায় বুথ লেভল এজেন্টদের (বিএলএ) সক্রিয় হওয়ার কথা বলা হবে। বিজেপি সূত্রের দাবি, শীঘ্রই যে হেতু বাংলায় এসআইআর-এর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে, তাই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিএলএ-দের অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে। এসআইআর ঘোষণা মাত্র তাঁদের সক্রিয় হতে হবে। কোনও অনুপ্রবেশকারীর নাম যাতে তালিকায় না-থাকে, সেই বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনে উপযুক্ত তথ্য, প্রমাণ এবং নথি জোগাড়ের কাজ করতে হবে।
কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি— এই দুই সীমান্তবর্তী জেলা দিয়ে বুধবার শমীকের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এর পরে সীমান্তবর্তী বাকি জেলাগুলিতেও একই ভাবে কর্মসূচি হবে বলে সূত্রের খবর। যদিও এই প্রসঙ্গে শমীকের বক্তব্য, ‘‘বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীরা বাংলায় ঢুকছে। বারাসত, মধ্যমগ্রাম এবং শিলিগুড়ি, এই তিন জায়গা থেকে ভুয়ো নথি বানিয়ে তারা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। গোয়েন্দা দফতর সরকারগুলিকে সাবধান করেছে, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন বাংলার মাটি ব্যবহার করে তাদের ‘স্লিপার সেল’কে সক্রিয় করার কাজ করছে। এটা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্ন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পশ্চিমবঙ্গে সরকার এবং সরকারি দলের মদতে এই কাজ হয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বাংলার মানুষকে অসচেতন ভাবার কারণ নেই। কেউ অন্যায্য ভাবে তাঁর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, কর্মসংস্থানের উপরে ভাগ বসাবে আর তাঁরা মুখ বুজে মেনে নেবেন, এখন আর সেই দিন নেই! তাঁরা তাঁদের মতো করে, তাঁদের ভাষাতেই এই দেশ-বিরোধী চক্রান্তকে প্রতিহত করবেন।’’