দলের সহকর্মী, নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের সুপারিশ অনুযায়ী অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থা করতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সমান্তরাল পরিকাঠামো গড়ে ওঠে বলে আদালতে নথি পেশ করে দাবি করল সিবিআই।সম্প্রতি আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।এসএসসির একজন কম্পিউটার ডেটা অপারেটরের লিখিত বয়ান আদালতে পেশ করেছে সিবিআই। সেই বয়ান অনুযায়ী সিবিআইয়ের দাবি, ২০১৮ সালের পর থেকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর নাকতলার বাড়িতে প্রায়শ রাজনৈতিক নেতাদের হাতে লেখা সুপারিশপত্র জমা পড়ত। আর হাতে লেখা গোছা, গোছা সুপারিশপত্র খোদ পার্থর বাড়ির অফিসের কম্পিউটারেই টাইপ করে তালিকা তৈরি করা হত। সেই সুপারিশপত্র অনুযায়ী, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী পদে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরির ব্যবস্থার জন্য নিয়মিত বৈঠক করতেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন নাকতলার বাড়িতে সকালে অথবা সন্ধ্যার পরে ওই বৈঠক বসত। প্রতি দিনই ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আপ্তসহায়ক সুকান্ত আচার্য।ওই ডেটা অপারেটর তাঁর লিখিত বয়ানে জানিয়েছেন, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক এবং এক প্রাক্তন মন্ত্রী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিয়মিত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন। সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, মাঝে মধ্যেই ওই সব বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন, এসএসসির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং প্রাক্তন সচিব সুবীরেশ ভট্টাচার্য।পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি নিয়োগ দুর্নীতিতে ওই সব নেতা,মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ টাকার বিনিময়ে বাঁকা পথে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কেরা তাঁদের নিজস্ব ‘প্যাডে’ হাতে লিখে অযোগ্য প্রার্থীদের নামের সঙ্গে মোবাইল নম্বর-সহ সুপারিশপত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জমা দিতেন। তার পরে কম্পিউটারে ওই সব নামের তালিকা এবং সুপারিশকারীর নাম লিখে টাইপ করে তালিকা তৈরি করা হত। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠদের সুপারিশ অনুযায়ী তৈরি, নামের তালিকা প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকান্ত আচার্যেরা শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং সুবীরেশ ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দিতেন। এর পরেই সেই সুপারিশ অনুযায়ী, অযোগ্য প্রার্থীদের বাঁকা পথে নিয়োগ করা হত।তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালীন বিকাশ ভবনে নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের ঘন ঘন যাতায়াত নানা প্রশ্ন তুলে দিতে পারে মনে করে নাকতলার বাড়িতে সমান্তরাল পরিকাঠামো তৈরি করেছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। পার্থর নাকতলার বাড়িতে আরও দু’জন অফিসারও পার্থ ঘনিষ্ঠ নেতা মন্ত্রীদের কাছ থেকে সুপারিশপত্র জমা নিতেন। এবং তা এসএসসি ডেটা অপারেটরের মাধ্যমে পার্থর অফিসের কম্পিউটারে টাইপ করে তালিকা তৈরি করা হত।সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “ওই ডেটা অপারেটর মামলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক জন সাক্ষী। ওই সাক্ষী তাঁর লিখিত বয়ানে পার্থর বাড়িতে উপস্থিত নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কদের নাম উল্লেখ করেছেন। এবং শাসক দলের এক প্রাক্তন মন্ত্রী ও তাঁর বান্ধবীর নামও লিখিত বয়ানে জানিয়েছেন। আদালতে ওই নথি পেশ করা হয়েছে।” সিবিআইয়ের ওই কর্তার দাবি, “নথির ভিত্তিতে স্পষ্ট, নিয়োগ দুর্নীতিতে শুধু মাত্র পার্থ চট্টোপাধ্যায় জড়িয়ে নেই। শাসক দলের অন্য নেতা মন্ত্রীরা কী ভাবে জড়িয়ে ছিলেন তাও প্রকাশ্যে আসবে।”