• গান্ধী-হত্যার 'পুনর্নির্মাণ' করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন, এ বার ব্যবসায়ী খুনে অভিযুক্ত হলেন নাথুরাম ভক্ত হিন্দু মহাসভা নেত্রী!...
    আজকাল | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০১৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড ‘পুনর্নির্মাণ’ করে দেশ জুড়ে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন হিন্দু মহাসভা নেত্রী পূজা শকুন পাণ্ডে। এ বার উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের এক ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় নাম জড়াল তাঁর। শিউরে ওঠার মতো এই হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত হিসাবে নাম ওঠার পর থেকেই নিখোঁজ পূজা। পুলিশ তাঁর স্বামী অশোক পাণ্ডেকে গ্রেপ্তার করেছে এবং পূজার খোঁজে একাধিক দল তল্লাশি চালাচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আর্থিক বিবাদের জেরে ওই দম্পতি এক জন ভাড়াটে খুনিকে দিয়ে ব্যবসায়ী অভিষেক গুপ্তকে খুন করিয়েছেন। কিন্তু মৃতের বাবা এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, পূজার সঙ্গে তাঁর ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অন্যদিকে অভিষেক সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাওয়ায় তাঁকে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেওয়ার ছক কষেন পূজা।

    পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত ৩০ বছর বয়সি অভিষেক গুপ্তর একটি বাইকের শোরুম ছিল। গত ২৩ সেপ্টেম্বর, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আলিগড়ের একটি মোড়ের কাছে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন অভিষেক, তাঁর বাবা নীরজ গুপ্ত এবং তুতো ভাই জিতু। বাস আসার পর নীরজ এবং জিতু বাসে উঠে পড়েন। অভিষেকও উঠতে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে বাইকে চেপে আসা দুই দুষ্কৃতী বাসের সামনে এসে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা অভিষেককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে, নীরজ গুপ্ত আর্থিক বিবাদের কারণে এই খুনের ষড়যন্ত্রে পূজা শকুন পাণ্ডে এবং অশোক পাণ্ডের নাম উল্লেখ করেন।

    তদন্তে নেমে গতকাল, বুধবার পুলিশ মহম্মদ ফজল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, যে অভিষেকের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি জেরায় স্বীকার করেছে যে এটি একটি ‘সুপারি কিলিং’ (চুক্তিভিত্তিক খুন) ছিল এবং সে তার সঙ্গী আসিফকে নিয়ে এই কাজ করে। তার দাবি, পূজা এবং তাঁর স্বামীই অভিষেককে খুনের ছক কষেন এবং এই কাজের জন্য তাঁদের ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

    এক পুলিশ আধিকারিক নীরজ কুমার জাডাউন জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে এবং পাণ্ডে দম্পতি ও অভিষেকের পরিবারকে চেনে, এমন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ফজলের খোঁজ মেলে। অশোক পাণ্ডেকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বার পূজা শকুন পাণ্ডে এবং অন্য শ্যুটার আসিফের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

    সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযুক্ত অশোক পাণ্ডে দাবি করেছেন, তাঁরা অভিষেককে খুব ভাল ভাবে চিনতেন এবং অভিষেকের বাবাই তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। অশোকের কথায়, "ও আমাদের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছে। আমরা ওর জন্য সব করেছি।" উল্টে অভিষেকের বাবা তাঁর কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন অশোক।

    পুলিশ আধিকারিক জাডাউন বলেন, "অভিষেকের বাবা তাঁর অভিযোগে অশোক পাণ্ডে এবং পূজা শকুন পাণ্ডের নাম করেছিলেন। একাধিক দল সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে এবং গভীর তদন্ত চালিয়েছে। আমরা অভিষেক, পূজা এবং অশোকের মধ্যেকার সম্পর্কও খতিয়ে দেখছি। অশোক পাণ্ডেকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন এক জন শ্যুটার, মহম্মদ ফজলকে গ্রেপ্তার করা হল। তার কাছ থেকে একটি বন্দুক উদ্ধার হয়েছে।”

    ওই আধিকারিক আরও জানান, ফজলকে জেরা করে জানা গিয়েছে যে সে পাণ্ডে দম্পতিকে বহু বছর ধরে চিনত। ওই দম্পতি তাকে এমন এক জনকে খুঁজে বার করতে বলে, যে খুন করতে পারবে। “এর পর ফজল এবং আসিফ পাণ্ডে দম্পতির সঙ্গে একটি বৈঠক করে। সেখানে অভিষেকের ছবি দেখানো হয়। ৩ লক্ষ টাকায় রফা হয় এবং শ্যুটারদের নগদ ১ লক্ষ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল," বলে জানান তিনি। এর পরেই খুনিরা এলাকা পরিদর্শন (রেকি) করে অভিষেককে খুন করে।

    তবে এই ঘটনায় চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন অভিষেকের বাবা নীরজ গুপ্ত। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “পূজা শকুন পাণ্ডের সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্ক ছিল। আমার ছোট ছেলের বিয়ের সময় পূজা অভিষেককে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। আমার ছেলে যখন ব্যবসা শুরু করে, তখন পূজা আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে যাতে ওকে ব্যবসার অংশীদার করা হয়।”

    নীরজ গুপ্ত জানান, অভিষেক তাঁর মাকে এই সম্পর্কের কথা জানিয়েছিল এবং সে পূজাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিল। “আমার ভয় ছিল, পূজা হয়তো জোর করে আমার ছেলেকে বিয়ে করে ফেলবে। এক দিন ও আমাকে বলেছিল, ‘তোমার ছেলে খুব চালাকি করছে’। পূজা ভয় পেয়েছিল যে অভিষেক ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।”

    অভিষেক এক সময় পূজার নম্বর ব্লক করে দেয়, যা তাঁকে আরও ক্ষিপ্ত করে তোলে বলে দাবি নীরজের। তিনি বলেন, "ও আমাকে বলেছিল, ‘তোমার ছেলে দূরত্ব বাড়াচ্ছে’।"
  • Link to this news (আজকাল)