• লোথালে মোদির স্বপ্নের প্রকল্প, কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
    বর্তমান | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • কৌশিক ঘোষ (গুজরাত থেকে ফিরে): গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় ২০১০ সালে নর্মদার তীরে সর্দার সরোবর ড্যামের কাছে বল্লভ ভাই প্যাটেলের বিশাল একটি মূর্তি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ১৮২ মিটার দীর্ঘ সেই মূর্তি , ' স্ট্যাচু অব ইউনিটি'- র উদ্বোধন ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে  করেন মোদি। এর  বছরখানেকের মধ্যে গুজরাতের বুকে  আরও একটি কীর্তি স্থাপনের উদ্যোগ নেন তিনি। সেটি হল আমেদাবাদ জেলার লোথালে 'ন্যাশনাল মেরিটাইম হেরিটেজ কমপ্লেক্স' গড়ে তোলা। ২০১৯ সালে- র মার্চে তিনি এই প্রকল্পের শিল্যানাস করেন। তারপর ৬ বছরের বেশি সময় পার হয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি লোথালের কাছে ভাবনগরে একটি অনুষ্ঠানে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লোথালের এই প্রকল্পটি যখন সম্পূর্ণ হবে তখন এটিও স্ট্যাচু অব ইউনিটির মতো দেশের অন্যতম 'আইডেন্টিটি ' হয়ে উঠবে।  লোথালে গিয়ে নির্মীয়মান প্রকল্পটি ঘুরে দেখে কাজ কর্মের পর্যালোচনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর  এই স্বপ্নের প্রকল্পটির কাজ কবে পুরোপুরি শেষ হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ সরকারি তথ্যই বলছে, এখনও প্রথম পর্যায়ের (১এ) কাজ শেষ হয়নি। এরপর আরো দুটি পর্যায়ের (১বি এবং ২) কাজ এখানে হবে। প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ কাজের ৬০ শতাংশের বেশি হয়ে গেছে বলে সরকারের দাবি। চলতি বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়টির উদ্বোধনের পরিকল্পনা আগে থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এব্যাপারে সরকারের তরফে  নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি।

    ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য লোথালে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পটি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে লোথাল সিন্ধু সভ্যতার একটি বন্দর শহর ছিল। এখানে  উন্নত শহরের পাশাপাশি জাহাজ চলাচলের জন্য বড় ডক তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৫০-৬০ এর দশকে লোথালে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করে পাওয়া সামগ্ৰী থেকে এই প্রমাণ মিলেছে। এখান থেকে জাহাজে পণ্য বোঝাই করে তা যেত সমসাময়িক প্রাচীন সভ্যতার মিশর, মেসোপটেমিয়া, পারস্যের বিভিন্ন বন্দরে। মহেঞ্জোদরা, হরপ্পার মতো সিন্ধু সভ্যতার অন্য শহরগুলি থেকে পণ্য লোথালে আসত বাইরে পাঠানোর জন্য এমনটাই মনে করেন ঐতিহাসিকরা।

    লোথালে এই প্রকল্পটি করার জন্য গুজরাট সরকার ৪০০ একর জমি দেওয়ার পাশাপাশি রাস্তা, পানীয় জল সহ বিভিন্ন পরিকাঠামো করে দেবে। কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক সাগরমালা প্রকল্পের অধীনে কাজটি রূপায়ণ করবে। দেশের বড় বন্দরগুলিও টাকা দেবে  প্রকল্পে। পরবর্তী পর্যায়ে এখানে বেসরকারি বিনিয়োগ হবে। দেশের নৌ বাণিজ্যের অতীত ঐতিহ্যর পাশাপাশি  বর্তমান নৌ শক্তিকে তুলে ধরা হবে এখানে। শুধু মামুলি একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, শিক্ষা, গবেষণা কেন্দ্র এবং বিনোদন পার্ক হিসেবে এটিকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

    প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হলেও প্রকল্পের সেরা আকর্ষণগুলি তখনই হচ্ছে না এটা পরিষ্কার । সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে মিউজিয়ামের ১৪ টি প্রস্তাবিত গ্যালারির মধ্যে ৬ টি হবে । প্রাচীন লোথাল শহরের ' রেপ্লিকা' থাকবে প্রথম পর্যায়ে। নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ, বিমান, হেলিকপ্টার প্রভৃতির নমুনা রাখা থাকবে।

    কিন্তু লোথাল মেরিটাইম হেরিটেজ কমপ্লেক্সের  সব থেকে আকর্ষণীয় জিনিসগুলি তৈরি হবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে। ৭৫ মিটার দীর্ঘ লাইট হাউস মিউজিয়াম হবে দ্বিতীয় পর্যায়ে। এর জন্য প্রস্তাবিত খরচ ধরা হয়েছে ২৬৬ কোটি টাকা। বাগিচা কমপ্লেক্স তৈরি হবে দ্বিতীয় পর্যায়ে। বিভিন্ন বিষয়ের উপর চারটি থিম পার্ক হবে তৃতীয় পর্যায়ে। তাই কয়েক মাসের মধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন হলেও পুরো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকেই যাবে। পুরো প্রকল্পটি কবে শেষ হবে সে ব্যাপারে সরকারি তরফে এখনও কিছু বলা হচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের কাজের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।
  • Link to this news (বর্তমান)