বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন পর্ব, সামলাতে শহরজুড়ে ছশোর বেশি কর্মী মোতায়েন পুরসভার, অতিরিক্ত পাম্প, বিভিন্ন ঘাটে ক্রেন, পে-লোডার
বর্তমান | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে প্রতিমা নিরঞ্জন-দুদিক সামলাতে ছয়শোর বেশি লোক ময়দানে নামিয়েছে কলকাতা পুরসভা। দশমীতে শহরজুড়ে বৃষ্টি হওয়ায় আগে থেকেই নবমীর বিকেলে আধিকারিকদের সঙ্গে প্রস্তুতি বৈঠক সেরে রেখেছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পাশাপাশি বিসর্জন পর্বের প্রস্তুতি দেখতে বাজেকদমতলা ঘাটেও যান মেয়র। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন আধিকারিকদের। সেই মতো সমস্ত ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে।
মেয়র জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টি হলে জমা জলের পরিস্থিতি সামলাতে বিভিন্ন ম্যানহোল, গালিপিটগুলি পরিষ্কার রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় মণ্ডপের বাইরে বা রাস্তার অনেক জায়গায় বাঁশ ফেলা রয়েছে। পুজো কমিটিগুলিকে সেগুলি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিমা নিরঞ্জন পর্ব সুষ্ঠুভাবে মেটাতে পুরসভা তরফ থেকে ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পুলিশেরও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
পুরসভার সূত্রে খবর, প্রতিবছরের মতো এ বছরও বাজেকদমতলা, নিমতলা ঘাটে সবথেকে বেশি প্রতিমা বিসর্জন হবে। এগুলি ছাড়াও মোট ১৮টি গঙ্গার ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি শহরের নটি পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হবে। গত বছরের রেকর্ড অনুসারে গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে ৩৮০৫টি এবং পুকুরগুলিতে ৬০৩টি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছিল। মোটামুটি সমসংখক প্রতিমা নিরঞ্জন হবে বলেই ধরা যেতে পারে। নিরঞ্জন-পর্ব সামলাতে বিভিন্ন ঘাটে পুরসভা তরফে ৪৩৬ জন মোতায়ন থাকবে। এর বাইরে প্রতিমার কাঠামোসহ পুজো-বর্জ্য সরাতে ১২৮টি লরি, ২০টি পে-লোডার এবং জল থেকে বিসর্জনের পর প্রতিমার কাঠামো তুলতে ৬টি হাইড্রা ক্রেন রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই মোটামুটি প্রতিমা নিরঞ্জন চলছে বিভিন্ন জায়গায়। আজ শুক্রবার সেই বিসর্জন পর্ব আরও গতি পাবে।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে তুমুল বৃষ্টিতে বানভাসি অবস্থা হয়েছিল কলকাতার। শহরের কিছু কিছু অংশে তিন-চার দিন ধরে জল জমে থাকায় দুর্ভোগে জেরবার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। তাই আগেভাগেই সতর্ক পুরসভা।
বৃষ্টির সময় বা জল জমলে রাস্তায় রাস্তায় ম্যানহোল, গালিপিট খুলে পরিষ্কার করার জন্য মোতায়েন থাকছেন ১৭৬ জন ফিল্ড কর্মী। পুরসভার নিকাশি বিভাগ সূত্রের খবর, শহরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ আন্ডারপাসের (কাঁকুড়গাছি এবং উল্টোডাঙা) জন্য আলাদা করে ২০ জনের একটি টিম প্রস্তুত রয়েছে। অর্থাৎ বিসর্জন পর্ব এবং বৃষ্টি সামলাতে সবমিলিয়ে ৬১২ জন কর্মী ময়দানে রেখেছে পুরসভা।
পুরসভার বক্তব্য, মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হলে জল জমবেই। বিশেষ করে যদি জোয়ারের সময় লকগেট বন্ধ থাকে এবং তখনই ঝেঁপে বৃষ্টি চলে, সেক্ষেত্রে রাস্তায় জল জমতে বাধ্য। সেই জমা জল কত তাড়াতাড়ি নামানো যায়, সেটাই লক্ষ্য থাকে। শহরের ৮৬টি পাম্পিং স্টেশনও পুরোদমে চালু।
সেই সঙ্গে যেখানে একটু বৃষ্টিতেই জল জমে যায়, সেসব অঞ্চলে জল নামানোর জন্য ৪০৬টি অস্থায়ী পাম্পের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেয়র বলেন, বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় যে সমস্ত জায়গায় জল জমার প্রবণতা বেশি, সেখানে পাম্পগুলিকে রাখা হয়েছে। যাতে প্রয়োজনে আর অন্য জায়গা থেকে টেনে নিয়ে এসে কাজ সামলাতে না হয়। জল জমলে দ্রুত নামানো যায়। নিকাশি বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ঘণ্টায় ২০-২২ মিমি বৃষ্টিপাত হলে তা সামলে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের নিকাশি ব্যবস্থার। কিন্তু তার বেশি বৃষ্টি হলে জল জমবে। তবে আমরা সতর্ক থাকছি। প্রত্যেকটি ঘটনা থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করি আমরা। ক’দিন আগে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টি হওয়ায় সমস্যা হয়েছে। আগামী দিনে এমন বৃষ্টি হলে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, সেই রূপরেখা তৈরি হচ্ছে।’