তোলাবাজির টাকা না পেয়ে লরি ভাঙচুর কাণ্ডে, বিভাগীয় তদন্তে দোষী প্রমাণিত, নিউ আলিপুর থানার দুই এসআইকে আর্থিক জরিমানা করলেন ডিসি
বর্তমান | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: তোলার টাকা না পেয়ে প্রায় ৩৫টি লরি ভাঙচুর করার ঘটনায় এবার বিভাগীয় তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় নিউ আলিপুর থানার দুই এসআইকে আর্থিক জরিমানা করলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ) প্রিয়ব্রত রায়। কলকাতা পুলিশের এক বিশেষ সূত্র জানাচ্ছে, ‘নিউ আলিপুর থানার এসআই সুরজিৎ রায়কে ১০ হাজার টাকা এবং এসআই শ্যামল সরকারকে ২ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করেছেন ডিসি।’চলতি বছরের জুলাই মাসের ঘটনা। লরি চালকরা পুলিশের চাহিদা মতো তোলা দিতে রাজি না হওয়ায়, ৮ জুলাই রাতের অন্ধকারে থানা থেকে কার্যত ঢিলছোঁড়া দূরত্বে নিউ আলিপুর থানার পুলিশের একটি দল পরপর প্রায় ৩৫টি লরিতে ভাঙচুর চালায়। ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন সকালে ক্ষিপ্ত লরি চালকরা নিউ আলিপুরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালে বিষয়টি জানাজানি হয়। সাম্প্রতিক কালে তো বটেই, কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে পুলিশের এমন ‘বেপরোয়া গুন্ডামি’র নজির অতীতে নেই বললেই স্বীকার করছেন বাহিনীর একাংশ। বাধ্য হয়ে তড়িঘড়ি সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে, কলকাতা পুলিশের কর্তারা নিউ আলিপুর থানার অভিযুক্ত চার এসআইকে সাসপেন্ড করেন। ৯ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত সাসপেন্ড ছিলেন এই পুলিশকর্মীরা। পাশাপাশি, নিয়ম মেনেই অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছিল। খোদ কলকাতা পুলিসের ডিসি (সাউথ) প্রিয়ব্রত রায় এই বিভাগীয় তদন্ত করেন। সম্প্রতি এই তদন্ত শেষে দোষী স্যবস্ত হয়েছেন এই দুই এসআই। তাই তাঁদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে এই তদন্তে বাকি দুই এসআইয়ের কী শাস্তি হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি। এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ) প্রিয়ব্রত রায়কে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকী হোয়াটস অ্যাপে প্রশ্ন পাঠানো হলেও উত্তর আসেনি। অতি সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে, অভিযুক্তের কাছে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে, তারকেশ্বর থানার এক মহিলা এসআইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। কলকাতা পুলিশের রেকর্ড ঘাটলে দেখা যাবে, ২০০৬-০৭ সালে ঠিক এই ধরণের অপরাধের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ নাইট ডিউটিতে গাড়ি থামিয়ে তোলাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়, কলকাতা পুলিশের ওয়ারলেসে কর্মরত এক সার্জেন্টের চাকরি চলে যায়। ফলে আগামী দিনে স্বাভাবতই প্রশ্ন উঠবে, নিউ আলিপুর লরি ভাঙচুর কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা কি দোষীদের অপেক্ষাকৃত হালকা শাস্তির বিধান দিলেন না।