অর্ণব আইচ: সারা বছর এই নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন তাঁরা। আবার কেউ বা পর্যটকদের গঙ্গাবক্ষে নৌকাবিহার করান। কিন্তু দশমী থেকে বিসর্জনের দিনগুলিতে গঙ্গার ঘাটের সুরক্ষা ও উদ্ধার কাজে এই মাঝি আর দাঁড়িরাই বড় সহায়ক হয়ে ওঠেন কলকাতা পুলিশের। বিসর্জনের সময় কোনও অঘটন রুখতে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ বা ডিএমজির সঙ্গে কলকাতার ঘাটগুলিতে নৌকা-সহ মাঝি ও দাঁড়িদেরও মোতায়েন করেছে লালবাজার। দুর্গাপুজোর পর লক্ষ্মীপুজোর বিসর্জনেও মোতায়েন থাকবেন তাঁরা। বিশেষ করে বিসর্জনের সময় যদি বৃষ্টি হয়, তবে ঘাটে দুর্ঘটনার শঙ্কা বেড়ে যায়। পুলিশের মতে, এই ক্ষেত্রে নৌকার মাঝিরাও পুলিশের বড় সাহায্যকারী হয়ে উঠবেন।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে গঙ্গার মূলত ২৪টি ঘাটে দুর্গাপুজো ও লক্ষ্মীপুজোর বিসর্জন হয়। এছাড়াও রয়েছে ৬টি বড় দিঘি, যেখানে ঠাকুর বিসর্জন হয়ে থাকে। তার উপর শহরের ১৯টি বড় পুকুর ও সরোবরে ঠাকুর বিসর্জন দেওয়া হয়। এই বছর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গঙ্গা ও দিঘি বা সরোবরের ঘাটগুলিতে বিসর্জনের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় গঙ্গাকেই। তাই ২৪টি গঙ্গার ঘাট-সহ ৩০টি ঘাটে পুলিশের পক্ষ থেকে দুজন করে ডিএমজির কর্মীকে। এছাড়াও বিসর্জনের জন্য ২৫টি নৌকা ভাড়া নিয়েছে লালবাজার।
এগুলির মধ্যে কিছু নৌকা মোতায়েন করা হয়েছে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ বা জল পুলিশের নিজস্ব ঘাটে। এ ছাড়া ২৪টি ঘাটে মোতায়েন করা হয়েছে বাকি নৌকাগুলি। প্রত্যেকটি নৌকায় রয়েছেন অন্তত একজন করে মাঝি ও দাঁড়ি। তাঁরা যে কেবল নৌকা চালান, এমনটা নয়। গঙ্গায় সাঁতার কাটতে প্রত্যেকে পটু। জোয়ার বা ভাটার স্রোতে জলে গা ভাসিয়ে গঙ্গা পারাপার করতে পারেন তাঁদের অনেকেই। আবার কোনও বিপদে, তথা কাউকে স্রোতে ভেসে যেতে দেখলে তাঁরাই ঝাঁপিয়ে পড়েন জলে। স্রোত থেকে অনায়াসেই ব্যক্তিটিকে উদ্ধার করে পাড়ে বা নিজেদের নৌকায় তোলেন তাঁরা। তাই বিসর্জনের সময় ডিএমজির সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি ঘাটে মূলত উদ্ধার কাজের জন্যই মোতায়েন করে রাখে নৌকাগুলি। এই ক্ষেত্রে মাঝি ও দাঁড়িরাই হয়ে ওঠেন পুলিশের বড় সহায়ক।
পুলিশ জানিয়েছে, নৌকা ছাড়াও কোনও ধরনের বিপদে এড়াতে অথবা উদ্ধার কাজের জন্য তৈরি রয়েছে জল পুলিশের স্পিডবোট ও লঞ্চ। একটি স্পিডবোটে তৈরি থাকছেন ৫ জন ডুবুরি। পুলিশের একটি লঞ্চ ৬ জন ডিএমজির কর্মীকে নিয়ে থাকছে বাজা কদমতলা ঘাটে। এছাড়াও ডিএমজির বিশেষ চারটি যন্ত্রচালিত নৌকা থাকছে বাগবাজার, নিমতলা, বাজা কদমতলা ও গোয়ালিয়র ঘাটে। জল পুলিশের তিনটি লঞ্চ ১৪টি ঘাটে ক্রমাগত টহল দিচ্ছে। একটি লঞ্চ মোতায়েন করা আছে জল পুলিশের নিজস্ব ঘাটে। এছাড়াও এই লঞ্চগুলি হাওড়ার দিকে চারটি ঘাটের উপর নজরদারি করবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।