• বাংলায় আরও লগ্নি করতে চান জিন্দাল, সস্ত্রীক ঘুরে দেখলেন কলকাতার পুজো
    প্রতিদিন | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • স্টাফ রিপোর্টার: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে শামিল হয়ে বাংলায় বিনিয়োগের বড় পরিকল্পনার কথা জানালেন জিন্দাল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল। বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনেই লগ্নির আশ্বাস দেন তিনি।

    ইতিমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজের সূচনাও হয়েছে। দুর্গাপুর বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণেও বড় বিনিয়োগ করার কথা শিল্প সম্মেলনে জানিয়েছিলেন জিন্দাল। এদিন বুঝিয়ে দেন, সেই সব বিনিয়োগের আশ্বাসপূরণ ছাড়াও আরও লগ্নিতে আগ্রহী তিনি।

    দশমীতে নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘের পুজোমণ্ডপে ঠাকুর দেখতে এসেছিলেন ইস্পাতশিল্পে অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান জেএসডত্ত্ব গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজ্জন জিন্দাল। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন স্ত্রী সঙ্গীতা। যাঁর সঙ্গে কলকাতার ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র। শৈশব থেকে বিবাহের আগে একটা বড় সময় এখানেই কাটিয়েছেন। স্ত্রীকে পাশে নিয়েই সজ্জন জানিয়ে দেন, মুম্বইয়ের গণপতি উৎসবের ব্যাপকতার থেকেও অনেক বেশি ব্যাপক বাংলার দুর্গোৎসব। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়াটাও ছিল সময়ের অপেক্ষা। সুরুচিতে জিন্দালকে মণ্ডপচত্বর ঘুরিয়ে দেখান রাজ্যের মন্ত্রী তথ্য ক্লাবের শীর্ষকর্তা অরূপ বিশ্বাস। ছিলেন আর এক শীর্ষ কর্তা স্বরূপ বিশ্বাসও। এবার সুরুচির থিম, আহুতি। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মদানের কথা মাথায় রেখেই থিম।

    বিষয়টি জিন্দালকে বোঝানো হয়। সজ্জন জিন্দাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রথমেই প্রত্যেককে ‘শুভ বিজয়া’ জানান। মুম্বইতে থাকায় তিনি গণপতি উৎসব ও প্যান্ডেল সম্পর্কে জানেন। সেই প্রসঙ্গ টেনেও বলেন, “এখানে দুর্গাপুজোয় প্রথম এলাম। দারুণ অভিজ্ঞতা হল। সঙ্গীতা তো এখানকার, অনেক দেখেছে। প্যান্ডেল-প্রতিমা সবটাই আলাদা। যেহেতু মুম্বইয়ে থাকি, তাই মুম্বইয়ে গণপতি উৎসব দেখি। কিন্তু বাংলার দুর্গাপুজো অন্য মাত্রার। শিল্পীরাও অন্য স্তরের। এখানে শিল্পীরা যেমন ভাবনায় ফুটিয়ে তোলেন, তা অন্য কোথাও দেখা যায় না। ইউনেসকোর ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নেওয়াটা উচিত ছিলই। হয়েছেও তাই।” তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা বলেন, “শিল্পী ও কিউরেটর বাংলায় যাঁরা রয়েছেন, আর কোথাও নেই। প্যান্ডেলের যে থিমের ভাবনায় অর্থ, অনেক কিছুই শেখায়।” বস্তুত, সজ্জন বাংলার দুর্গাপুজো যে বিশ্বজনীন, সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি লগ্নির ব্যাপারেও তাঁর আগ্রহ ও অঙ্গীকার ফের জানান।

    গত এপ্রিলেই শালবনিতে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে ৮০০ মেগাওয়াট করে দু’টি বিদ্যুতের প্ল্যান্ট তৈরির কাজ শুরু হয়। জিন্দাল গোষ্ঠীর প্রকল্পের শিলান্যাসও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই সজ্জন জিন্দালের সঙ্গে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে জিন্দাল বলেছিলেন, ১০ বছরে বিরাট উন্নয়ন হয়েছে এখানে। তার ক্রেডিট মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের। রাজ্যের উন্নতিতে দিদি অনেক কাজ করেছেন আর বাংলার উন্নতি হলে দেশেরও উন্নতি হবে।” শালবনিতে যে জমিতে পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি হচ্ছে, সেই জমি যেহেতু কৃষকদের তাই কৃষকদের উপকারের বিষয়টি তোলেন জিন্দাল। বুঝিয়ে দেন, কৃষকরা যাতে উপকৃত হন সেই কথা তাঁদের বারবার বলে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী।

    তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি ২ হাজার একর শিল্পপার্কেরও শিলান্যাস হয় শালবনিতে। তারও আগে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের প্রথম দিনই ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা করেছিলেন তিনি। পাওয়ার প্ল্যান্টের কথাও জানান। মাস তিনেকের মধ্যে সেই কেন্দ্রের শিলান্যাসও হয়। বাণিজ্য সম্মেলনে আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন তিনি। জেএসভত্ত্ব গ্রুপের পক্ষে দূর্গাপুর বিমানবন্দরের পরিকাঠামো উন্নত করে তোলার লক্ষ্যেও বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করা হবে বলে জানান। এই বিনিয়োগ সম্পূর্ণ দুর্গাপুরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও জানান সজ্জন জিন্দাল।
  • Link to this news (প্রতিদিন)