আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ের অভিশপ্ত ২৬/১১-তে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছিলেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর কমান্ডো বজরং সিং। সেই বীর যোদ্ধা এখন মাদক চোরাচালান চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গিয়েছে। রাজস্থান পুলিশ তাঁকে গাঁজা চোরাচালান চক্রের ‘কিংপিন’ ঘোষণা করেছে। বুধবার রাতে চুরু থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেল বিকাশ কুমার বলেছেন, বজরং তেলঙ্গানা এবং ওড়িশা থেকে রাজস্থানে গাঁজা পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রাক্তন ওই কমান্ডো প্রায় ২০০ কেজি নিষিদ্ধ মাদক সহ ধরা পড়েছেন। সিকার জেলার বাসিন্দা বজরং তাঁর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে অনেক দিন ধরেই পুলিশের রাডারে ছিলেন। তাঁর জন্য ২৫ হাজার টাকা নগদ পুরস্কারও ছিল। পুলিশ জানিয়েছে যে রাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (ATS) এবং মাদকবিরোধী টাস্ক ফোর্স (ANTF) দ্বারা পরিচালিত ‘অপারেশন গাঞ্জনে’-এর আওতায় দু’মাসের অক্লান্ত প্রচেষ্টার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বজরং সিং দশম শ্রেণীর পর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ছয় ফুট লম্বা গড়ন এবং শারীরিক সক্ষমতা তাঁকে সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীতে (BSF) কেরিয়ার গড়তে সাহায্য করেছিল। বিএসএফ কনস্টেবল হিসেবে চাকরি করার সময়, তিনি পাঞ্জাব, অসম, রাজস্থান, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে দেশের সীমান্ত রক্ষা করেছিলেন এবং মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
দেশের নিরাপত্তার প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ঊর্ধ্বতন কর্তাদের নজরে পড়ে এবং তাঁকে দেশের সেরা সন্ত্রাস দমন বাহিনী, এনএসজি-তে নির্বাচিত করা হয়। তিনি সাত বছর কমান্ডো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এনএসজিতে চাকরির সময় তিনি ২০০৮ সালে ২৬/১১ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে অংশ নেন। পুলিশ জানিয়েছে, ২০২১ সালে বজরংয়ের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়ে যায়। তিনি রাজস্থানের গ্রামে ফিরে একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন। এমনকি তিনি তাঁর স্ত্রীকে গ্রামের নির্বাচনে প্রার্থীও করেছিলেন। কিন্তু তিনি হেরে যান।
বজরং একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ যে কীভাবে একসময় জাতির সুরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একজন কমান্ডো নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলেছেন এবং মাদক পাচারের মতো জঘন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছেন। রাজনীতিতে আসার পরেই তিনি অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসেন। একজন সহযোগীর কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে গাঁজার ব্যবসা থেকে তিনি কতটা আর্থিক লাভ করতে পারেন। ওড়িশা সম্পর্কে তার জ্ঞান এবং বিএসএফ-এর অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে, তিনি ওড়িশা এবং তেলেঙ্গানায় তাঁর পুরনো যোগাযোগের মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিছু লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। এক বছরের মধ্যেই তিনি সাফল্য ধরা দেয় এবং গাঁজা সিন্ডিকেটের প্রধান নেতা হয়ে ওঠেন।
ছোটখাটো কনসাইনমেন্টে কাজ করতেন না বজরং। রাজ্য সীমান্ত পেরিয়ে কুইন্টাল কুইন্টার গাঁজা পাচারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলি তিনি করতেন। বছরের পর বছর ধরে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তার কাছ থেকে কয়েক কুইন্টাল নিষিদ্ধ মাদক উদ্ধারের পর, তাঁর নিজ জেলা সিকারে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২০২৩ সালে দুই কুইন্টাল গাঁজা পাচারের অভিযোগে তাঁকে হায়দরাবাদের কাছে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এটিএস এবং এএনটিএফ দল দুই মাস ধরে সিং-এর পিছনে ছিল। তারা গাঁজা ব্যবসার মূল চক্রীদের যোগসূত্র খুঁজছিল। বজরংয়ের নাম অনেক পরেই সামনে আসে। যদিও তিনি তাঁর পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন। জাল মোবাইল আইডি ব্যবহার করে এবং প্রত্যন্ত গ্রামে লুকিয়ে থেকে বার বার গ্রেপ্তারি এড়িয়ে যাচ্ছিলেন বজরং।
রাঁধুনির মাধ্যমে তাঁর উপর নজর রাখা হয়েছিল। নানা জায়গায় খোঁজ চালিয়ে পুলিশ তাঁর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। বুধবার পুলিশের প্রচেষ্টা সফল হয়। তারা বজরংকে বাইক চালিয়ে এলাকা দিয়ে যেতে দেখেন। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি, কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে একজন প্রাক্তন কমান্ডোর বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপ বিপজ্জনক হতে পারে। তারা চুপচাপ বজরংকে তাঁর গোপন আস্তানা অবধি অনুসরণ করে এবং সঠিক পরিকল্পনার পরেই তারা আকস্মিক অভিযান চালায়। এরপরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।