এক মিনিটের ‘সাইক্লোন’-এ তছনছ নদীয়া জেলার হরিণঘাটা, নারায়ণপুরেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি...
আজকাল | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার ভোরে হঠাৎই প্রবল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল নদীয়া জেলার হরিণঘাটা ব্লকের অন্তর্গত বিরহী-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়ণপুর এলাকার একাধিক গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোর ৫টার সময় এক মিনিটব্যাপী এই সাইক্লোন সদৃশ ঝড়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আচমকা শুরু হওয়া প্রবল বেগের এই ঝড়ে গ্রামের জনজীবন কার্যত থমকে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝড়ে নারায়ণপুর এলাকার অন্তত ১০ থেকে ১২টি কাঁচা ও টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। বহু বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গিয়ে পড়েছে দূরের এলাকায়। হঠাৎ করে ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যায় এদিন ভোরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় ঝড়। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঝড়ের সময় এতটাই শব্দ হচ্ছিল যে অনেকেই ভয় পেয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
চাষবাসেও এই ঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বহু ধান, সবজি ও অন্যান্য শাকসবজির জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কলাচাষ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু কলাগাছ ঝড়ের দাপটে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে বহু বাড়ির চারপাশে থাকা ইটের ও কাঁটাতারের পাঁচিলও ভেঙে পড়েছে। কৃষিজীবী পরিবারগুলির মতে, এই ক্ষতি পূরণ করা সহজ নয়। কারণ, ফসল ইতিমধ্যেই পাকতে শুরু করেছিল।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে একটি দল পাঠানো হয়েছে। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় ও ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলাপ্রশাসনের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে দ্রুত আর্থিক সাহায্য ও পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
তবে এলাকাবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আগাম কোনও সতর্কবার্তা না থাকায় তারা প্রস্তুত থাকতে পারেননি। হঠাৎ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সকলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের ফলেই এমন হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়েছে।
এই মুহূর্তে এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন ও স্থানীয় পঞ্চায়েত যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে তা কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু সময় লাগবে বলেই মনে করছেন সকলে।
অন্যদিকে, শুক্রবার ভোরে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে চন্দননগরের নাড়য়া শান্তিরমাঠ এলাকা। কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে পুজো মণ্ডপ থেকে বাড়ির চাল, আমগাছের ডাল। মণ্ডপে লাগানো ঝাড় ভেঙে পড়েছে। শুক্রবার সকালে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের দমকা ঝড়ে এমন অবস্থা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার ভোরবেলা হঠাৎ দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে, সঙ্গে বৃষ্টি। হঠাৎ টর্নেডোর মত পাক খাওয়া ঝড় এলাকার উপর আছড়ে পরে। তাতেই সব তছনছ। ঝড়ের দাপটে ভেঙে যায় নাড়ুয়া শান্তির মাঠ এলাকার একটি পুজো কমিটির মণ্ডপ। আশেপাশে থাকা বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে ইটের দেওয়াল। বাড়ির টিনের চাল উড়ে গিয়েছে।
নাড়ুয়া এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ভোর বেলার হঠাৎ ঝড়ে সবই লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছেছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এলাকার মানুষের। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই। ক্ষতিগ্রস্ত মণ্ডপের প্রতিমা দশমীর দিনই বিসর্জন হয়ে গিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারও টর্নোডোয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সন্দেশখালির কিছু এলাকা। সন্দেশখালি-১ ব্লকের পাথরঘাটা এলাকায় টর্নেডো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শতাধিক বাড়ি৷ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে নাগাদ হঠাৎই বৃষ্টি হতে হতে প্রায় এক মিনিটের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড আগারহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাথরঘাটা গ্রাম।