• ঘরের মধ্যে মজুত ছিল বোমা! মুর্শিদাবাদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, মৃত মহিলা, 'নিখোঁজ' এক নাবালক ...
    আজকাল | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়িতে মজুত করে রাখা ছিল বোমা। সেই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যু হল এক মহিলার। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার  অন্তর্গত কামুরদিয়ার- ঘাটপাড়া এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই মহিলার নাম ছিদ্দতন খাতুন (৪০)। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মহিলাকে ডোমকল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।  মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, 'ঘোড়ামারা পঞ্চায়েত এলাকায় একটি বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ডোমকল থানার অফিসাররা সেখানে গিয়ে একজন মহিলাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার বাড়ির পিছন দিকের একটি উঠোনে  গোপনে বোমা মজুত করে রাখা হয়েছিল। সেই  বোমা বিস্ফোরণের  ঘটনায় মহিলা আহত হয়েছিলেন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। ডোমকল থানার পুলিশ এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে ওই মহিলার স্বামী গফুর মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ জন্য আটক করেছে। '

    স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে গফুর এবং ছিদ্দতনের বছর পাঁচেকের ছেলের  কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।  তাঁদের অনুমান, বোমা বিস্ফোরনের সময় ছিদ্দতনের খুব কাছেই ছিল ওই নাবালক। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সেও গুরুতর আহত হয়েছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। তবে পুলিশ আসার আগেই তাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে একাধিক গ্রামবাসী দাবি করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গফুর মণ্ডলের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিদ্দতন খাতুন। গফুরের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার কয়েক বছর পর ছিদ্দতনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। গফুর এবং তাঁর প্রথম স্ত্রীর ছেলে গিয়াস মণ্ডল বছরখানেক আগে পর্যন্ত কেরলে পরিযায়ী শ্রমিক সরবরাহের কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতেন।  বছর তিনেক আগে গিয়াস কেরল থেকে স্থায়ীভাবে ডোমকলে ফিরে এসে জমি জায়গা কেনা-বেচার কাজ  শুরু করেছেন। জমি জায়গা বিক্রির এই ব্যবসায় তাঁর সঙ্গে বাস্তুল মণ্ডল নামে স্থানীয় পঞ্চায়েতের এক সদস্যও জড়িয়ে রয়েছেন বলে এলাকাবাসীর বক্তব্য। গিয়াস নিজেও একটি রাজনৈতিক দলের বুথ সভাপতি পদে রয়েছেন । 

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেরল থেকে কাজ করে পাওয়া টাকা জমিয়ে গিয়াস মণ্ডল নদিয়ার তেহট্ট থানা এলাকার বাসিন্দা জার্জিস শেখ নামে এক জমি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে জমি কিনেছিললেন। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, এলাকায়  কুখ্যাত দুষ্কৃতী হিসেবে গিয়াসের পরিচয় রয়েছে। দিনের বেলাতেও তার সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র থাকে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সম্প্রতি জমি জায়গাকে কেন্দ্র করে নদিয়ার জার্জিসের সঙ্গে  ডোমকলের গিয়াস এবং বাস্তুলের বড় বিবাদ ঘটেছিল বলেও খবর স্থানীয় সূত্রে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মারামারির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে নদিয়ার তেহট্ট থানার  গিয়াস এবং বাস্তবের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের হয়েছে।

    তবে গিয়াস নিজের বাড়ির পেছনে একটি ঘরের মধ্যে বিপুল পরিমাণে বোমা মজুত করে রেখেছিলেন কেন? তা নিয়েও এলাকাবসীর মধ্যে নানা আলোচনা। নাম না প্রকাশের শর্তে গিয়াসের এক প্রতিবেশী বলেন, 'এলাকায় গিয়াস এতটাই আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছে যে আজ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর ডোমকল থানার পুলিশ আধিকারিকেরা যখন গ্রামে আসেন তখন কেউ পুলিশকে কোন বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে  তা দেখিয়ে দিতে রাজি হচ্ছিলেন না।'

    ওই প্রতিবেশী এও জানান, 'গফুর অত্যন্ত নিরীহ ব্যক্তি। সে চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাদের পলু পোকা থেকে সুতো তৈরির ব্যবসাও রয়েছে। 'কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, বর্ষার কারণে এখন পলু পোকা থেকে সুতো তৈরির কারবার বন্ধ থাকায় গফুর সুতো তৈরির সমস্ত সরঞ্জাম একটি ঘরে মজুত করে রেখেছিল। সূত্রের খবর, কাউকে কিছু না জানিয়ে গিয়াস এবং বাস্তুল সেই ঘরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বোমা একটি প্লাস্টিকের পাত্রের মধ্যে মজুত করে রেখেছিল। শুক্রবার দুপুর নাগাদ ছিদ্দতন নিজের ছোট ছেলেকে সঙ্গে করে নিয়ে ওই ঘরে যান এবং ঘরে থাকা কিছু জিনিস সরানোর পর প্লাস্টিকের পাত্রটি জোরে টেনে বার করতে যান।  সেই সময় সমস্ত মজুত বোমা একসঙ্গে ফেটে যায় বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর ডোমকল থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে।

     
  • Link to this news (আজকাল)