• দশমীতে পুজো শুরু! দেবী চণ্ডীর আরাধনায় মাতল রায়গঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম
    প্রতিদিন | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: বাতাসে বিষাদের সুর। কৈলাস ফিরে গিয়েছেন মা। আবার এক বছরের অপেক্ষা। মনখারাপ সকলের। কিন্তু একেবারে উলটো ছবি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কমলাবাড়ি (২) এর প্রত্যন্ত খাদিমপুর গ্রামের। দশমীতে মন খারাপ হয় না এখানকার বাসিন্দাদের। বরং অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা। কারণ, এই দিনেই যে তাঁরা মেতে ওঠেন চতুর্ভুজা দেবী চণ্ডীর পুজোয়। সকলের কাছে যা পুজোর সমাপ্তি, তাঁদের কাছে সেটাই সূচনা।

    কয়েক বছর নয়, প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে এই প্রত্যন্ত গ্রামে দশমীর দিন থেকেই দেবীর আরাধনা শুরু হয়! এমনটাই জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মায়ের রূপ এখানে অনেকটাই আলাদা। চতুর্ভুজা দেবীচণ্ডী সিংহের উপর বসে বলাইচণ্ডী রূপে পূজিত হন। তবে মহিষাসুর নেই। তবে দেবীর পাশে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীর দেবী স্বমহিমায়। পুজোর শেষে রাতভর দেবী চণ্ডী মন্দির চাতালে ভক্তরা শতাধিক পাঁঠা উৎসর্গ করেন। পুজো একদিনের। তবে পুজো উপলক্ষে মেলা চলবে শনিবার পর্যন্ত।

    তবে কেন দশমীর দিন পুজো? কেউ কেউ বলেন, কয়েকশো বছর আগে দশমীর দিন এই গ্রামে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঘরবাড়ি তছনছ হয়ে যায়। দুর্যোগে মারা যান বহু মানুষ। অনেক শস্য ফসল নষ্ট হয়। তারপর থেকেই গ্রামের মঙ্গল কামনায় বাসিন্দারা বলাইচণ্ডী পুজো শুরু করেন।

    একদিনের এই পুজোর পর প্রতিমা বিসর্জন হয় না। সারাবছর যাতে বাসিন্দারা পূজার্চনা করতে পারেন, সেই জন্য প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় না। তবে প্রতিবছর বিশ্বকর্মা পুজোর পরেরদিন দেবীর বিসর্জন হয়। বিসর্জনের পরে মৃৎশিল্পীদের প্রতিমার বরাত দেওয়া হয়। বংশ পরম্পরায় শিল্পীরা এই প্রতিমা গড়েন। ঠাকুরদালানের চাতালে বসে থাকা বৃদ্ধ তাঁরানন্দ বর্মন বলেন, “প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে দশমীর সন্ধ্যা থেকে বংশ পরম্পরায় বলাইচণ্ডী পুজোর আয়োজন করা হয়। আচার উপাচার মেনে নিষ্ঠা সহযোগে পুজোর রাতভর হাজার হাজার ভক্তদের ভিড় দেখা যায়।” পুজো কমিটির সম্পাদক রবেন বর্মন জানান, “দুর্গাপুজোয় নয়, সারা বছর ধরে এই বলাইচণ্ডী পুজোর জন্য সকল বাসিন্দা অপেক্ষা করেন।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)