• দশমীর গোধূলি লগ্নে উমাকে লন্ঠন জ্বেলে বিদায় জানালো রোজি খাতুন, সম্প্রীতির সৌজন্য নজর কাড়ল চাঁচলের এই পুজোয়
    এই সময় | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • বাচ্চা মেয়ের হাতে লন্ঠন জ্বালিয়ে মা দুর্গাকে বিদায় জানানো হলো। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ একত্রিত হয়ে প্রতি বছর রীতিনীতি মেনে উমাকে বিদায় জানান। এমনই এক নজর কাড়া বিসর্জনের সাক্ষী থাকল মালদা জেলার চাঁচল। মহানন্দার বুকে ঘটে সম্প্রীতির আদান প্রদান। আর এই রীতি চলে আসছে প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর ধরে। এই রীতিতে বদল ঘটেনি আজও।

    উৎসব মানেই সম্প্রীতির বার্তা। যে কোনও উৎসবকে ঘিরেই ঘটে মানুষে মানুষে মিলন। এই কথা কেবল প্রবাদ নয়, বাস্তবে এই কথা যে সত্যি তা আরও এক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মালদা জেলা। যেখানে হাতে লন্ঠন নিয়ে আলো জ্বালতে দেখা গেল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে।

    আপামর বাঙালির মন ভারাক্রান্ত। বাপের বাড়িতে চারদিন কাটিয়ে উমা এ বার ফিরে গেছে কৈলাশের পথে। কষ্ট আবেগ সব কিছু মনের মধ্যে চেপে রেখে আরও একটা বছরের অপেক্ষা শুরু। দিকে দিকে চলছে প্রতিমা নিরঞ্জন। আর মালদার এই প্রতিমা নিরঞ্জনই নজর কাড়ল মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। ধর্ম বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া একজন প্রকৃত মানুষের পরিচয়। আর সেই ছবি ধরা পড়ল মালদার চাঁচলের পাহাড়পুরের মরা মহানন্দার ঘাটে।

    তবে এই ঘটনা আজকের নয়, মালদার চাঁচলের এই পুজোর বয়স প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর। মালদা জেলার চাঁচলের রাজা শরৎচন্দ্র রায় চৌধুরীর হাত ধরে শুরু হয়েছিল এই পুজো। লোকমুখে প্রচলিত মহানন্দা নদীর ওপারে রয়েছে শাওরগাছি গ্রাম। এক সময় ভয়ঙ্কর মহামারীর কবলে পড়ে গ্রামটি। বহু মানুষ আক্রান্ত হন এই মহামারীতে। সেই সময় গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন স্বপ্নাদেশ পান। দেবী জানান দশমীর গোধূলি লগ্নে দেবীর বিদায় বেলায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ মহানন্দার ওপার থেকে পথ দেখাবেন দেবীকে। আর এই রীতি অটুট রয়েছে আজও। তবে লন্ঠনের পরিবর্তে এখন অনেকে মোবাইলের টর্চও ব্যবহার করে থাকেন। বিজয়ার দিনে এই অপূর্ব দুর্লভ ছবি দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ।

    এই পুজো প্রসঙ্গে চাঁচল রাজবাড়ি ট্রাস্টবোর্ডের সম্পাদক পার্থ চক্রবর্তী বলেন ‘চলতি বছরও সংখ্যালঘুদের লন্ঠন দেখানোর নীতি অনুযায়ী একটি বাচ্চা মেয়ের হাতে দেখা গিয়েছে লন্ঠন। নদীর ওপার থেকে এই ভাবেই জানাচ্ছেন দেবী চণ্ডীকে বিদায়। বিসর্জনে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এই রকম সম্প্রীতির বার্তা আর কোথাও না, একমাত্র দেখা যায় চাঁচলে’।

  • Link to this news (এই সময়)