• শিশুমৃত্যুর মিছিল বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যে! নেপথ্যে কি বিষাক্ত কাশির সিরাপ? পরীক্ষা ছাড়াই ওষুধকে ক্লিনচিট দেওয়ার অভিযোগ বিরোধীদের...
    আজকাল | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাশির সিরাপে শিশুমৃত্যুর আতঙ্ক ফিরল দেশজুড়ে। মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে বেশ কিছু শিশুর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় নাম জড়াল 'কোল্ডরিফ' নামক একটি কাশির সিরাপের। গোটা ঘটনার জেরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। যদিও এখনও পর্যন্ত কাশির সিরাপের সঙ্গে শিশুমৃত্যুর সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ বিজেপি শাসিত দুই রাজ্যের মন্ত্রীরা। আতঙ্কের আবহে তড়িঘড়ি পদক্ষেপ করে শুক্রবার তামিলনাড়ু সরকার রাজ্যে ওই সিরাপের বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই সিরাপ নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে তদন্ত শুরু হলেও মধ্যপ্রদেশ সরকার অবশ্য শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সিরাপের যোগ মানতে নারাজ।

    ঘটনার সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ায়। অভিযোগ, সেখানে কিডনি বিকল হয়ে নয়টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগে ওই শিশুরা এই নির্দিষ্ট কাশির সিরাপটি খেয়েছিল। একই ঘটনা ঘটেছে রাজস্থানেও। সেখানে সিকার জেলায় দুই শিশু এবং ভরতপুরে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 

    মহকুমা প্রশাসনের তরফ থেকে কোল্ডরিফ এবং নেক্সট্রো ডি এস নামের দুটি কাফ সিরাপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই মধ্যপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেন্দ্র শুক্ল ঘোষণা করেন শিশুমৃত্যুর সঙ্গে কাশির সিরাপের কোনও যোগ নেই। তিনি বলেন, "কাশির সিরাপ থেকে এই মৃত্যু হয়নি।" যদিও পরে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন সিরাপের নমুনা নাগপুর এবং পুণের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আই সি এম আর)-এর রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। রাজ্যে কি তবে এই ওষুধগুলি নিষিদ্ধ করা হবে? এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী দাবি করেন, "কাশির সিরাপের উপর ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি নিশ্চিত কাশির সিরাপের কারণে মৃত্যু হয়নি।"

    অন্যদিকে, রাজস্থান সরকার জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনও মতেই দোষীদের ছাড়া হবে না বলেও দাবি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। রাজস্থানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জহর বেদম জানিয়েছেন প্রাথমিক তদন্তে চিকিৎসকদের ক্লিনচিট দেওয়া হয়েছে। মরুরাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে জারি করা একটি বিবৃতিতেও একই কথা জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ভরতপুর ও সিকারের শিশুমৃত্যুর ঘটনা সরকারি 'বিনামূল্যে ওষুধ প্রকল্প'-এর অধীনে বিতরণ করা কাশির সিরাপের কারণে ঘটেনি।

    রাজস্থানের গণস্বাস্থ্য অধিকর্তা রবি প্রকাশ শর্মা জানিয়েছেন, দু'টি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাড়িতেই শিশুদের এই সিরাপ খাওয়ানো হয়েছিল। তাঁর আরও দাবি, শিশুদের জন্য ডেক্সট্রোমেথরফ্যান নামক ওষুধ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ, ফলে কোনও ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা ওই ওষুধ লেখেননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংয়ের তরফ থেকেও সিরাপ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এই নির্দেশ আসার পর রাজস্থান মেডিক্যাল সার্ভিসেস কো অপারেশন লিমিটেড সিরাপের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কমিটির তরফ থেকে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

    তবে দায় নিতে অস্বীকার করলেও সিকারের ঘটনায় এক চিকিৎসক নিয়ম ভেঙে ডিএক্সএম যুক্ত সিরাপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে তাঁকে এবং সংশ্লিষ্ট ফার্মাসিস্টকে সাসপেন্ড করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে খবর।

    রাজস্থানে এই সিরাপ খেয়ে বমি, তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এবং জ্ঞান হারানোর মতো উপসর্গে আরও বেশ কয়েকজন শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই আতঙ্কের মধ্যেই এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটান এক চিকিৎসক। তারাচাঁদ যোগী নামের ওই চিকিৎসক সিরাপটি যে নিরাপদ, তা প্রমাণ করতে গিয়ে নিজেই সেটি পান করেন বলে খবর। কিন্তু সিরাপ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিজেই জ্ঞান হারান। ঘটনা জানাজানি হতেই সিরাপ আদৌ নিরাপদ কি না তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছে জনসাধারণের মধ্যে। 

    সূত্রের খবর মধ্যপ্রদেশ থেকে ৫০০ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল তথা এন সি ডি সি। ইতিমধ্যেই সেই রিপোর্টে সাফ জানানো হয়েছে, পরীক্ষিত নমুনায় কোনও সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু মেলেনি। ফলে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়েছে কাশির সিরাপের উপর। এই পরিস্থিতিতে আগে ভাগেই সতর্ক হয়েছে স্টালিন সরকার। তামিলনাড়ুতে তড়িঘড়ি নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওষুধটি।
  • Link to this news (আজকাল)