আজকাল ওয়েবডেস্ক: হায়দরাবাদের সাইবারাবাদ পুলিশ গত সপ্তাহে এক ৩৩ বছর বয়সী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি স্ত্রীর অজান্তে দাম্পত্য সম্পর্কের ভিডিও লাইভস্ট্রিম করে অর্থ রোজগার করছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত নিজের শোবার ঘরে ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
২০১৬ সালের নভেম্বরে ভুক্তভোগী স্ত্রী, যিনি নিজেও একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, সাইবার ক্রাইম পুলিশে অভিযোগ জানান। তিনি জানান, এক বন্ধু তাঁকে সতর্ক করেন যে ইন্টারনেটে কিছু পর্ন সাইটে তাঁর ও তাঁর স্বামীর যৌন ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ তদন্তে নামলে ভিডিওটির আইপি অ্যাড্রেস প্রথমে কেরালার ত্রিশূরে খুঁজে পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে স্থানীয় একজন স্বীকার করেন, তিনি ওই ভিডিও একটি জনপ্রিয় পর্ন সাইট থেকে ডাউনলোড করে অন্য সাইটে আপলোড করেছিলেন।
সাইবারাবাদ পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এস. জয়ারাম জানিয়েছেন, আরও গভীর অনুসন্ধানে জানা যায় যে ভিডিওগুলি মূলত লাইভস্ট্রিম করা হচ্ছিল দম্পতির শোবার ঘর থেকেই। “এই মুহূর্তেই আমরা স্বামীর প্রতি সন্দেহ করি। তাঁর ই-মেল, ব্যাংক লেনদেন ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে যথেষ্ট প্রমাণ হাতে আসে,” বলেন তিনি।
পুলিশি জেরায় অভিযুক্ত স্বামী স্বীকার করে যে, তিনি ল্যাপটপ এমনভাবে বসাতেন যাতে স্ত্রীর দৃশ্যগুলো ক্যামেরায় আসে কিন্তু তাঁর নিজের মুখ বেশিরভাগ সময় আড়ালেই থাকে। স্ত্রীকে বিভ্রান্ত করতে একইসঙ্গে ল্যাপটপে সিনেমা চালিয়ে রাখতেন। তদন্তে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত ছোটবেলা থেকেই পর্নগ্রাফির নেশায় আসক্ত। পরবর্তীতে তিনি কিছু ওয়েবসাইটে নিজেকে ‘মেল এসকর্ট’ হিসেবে নথিভুক্ত করেন। আর্থিক লোভেই তিনি স্ত্রীর অজান্তে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও পর্ন সাইটে লাইভস্ট্রিম করতে শুরু করেন।
এই ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় (নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে শব্দ, অঙ্গভঙ্গি বা কাজ), তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ ধারা (ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অশ্লীল তথ্য প্রচার) এবং ৬৬-ই ধারা (ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন) অনুসারে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী স্ত্রী অনুরোধ করেছেন যেন বিষয়টি প্রকাশ্যে না আনা হয়, কারণ এতে তাঁর সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ণ হতে পারে। তাই গ্রেপ্তারি অভিযান ও তদন্ত প্রথমদিকে গোপন রাখা হয়েছিল। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার উপর আক্রমণ কতটা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, এবং ঘরের চার দেওয়ালের ভেতরেও একজন নারী কতখানি নিরাপত্তাহীনতার শিকার হতে পারেন।