• কফ সিরাপ খেয়ে শিশু মৃত্যুর মর্মান্তিক ঘটনা!  মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ১২টি শিশুর প্রাণ গেল ...
    আজকাল | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
  • মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ার ছোট্ট শহরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। কয়েক দিন আগেও যেটিকে ‘মৌসুমি জ্বর’ ভেবে এড়িয়ে গিয়েছিল মানুষ, সেটিই আজ রূপ নিয়েছে মৃত্যুর মিছিলে। মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে নয়জন শিশুর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে আকস্মিক কিডনি বিকল হওয়ার অদ্ভুত দুঃখজনক ঘটনা। রাজস্থানের সিকার জেলাতেও একই ধরনের মর্মান্তিক দৃশ্য ফুটে উঠেছে— আরও তিন শিশুর মৃত্যু। দুই রাজ্য মিলিয়ে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২।

    স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রশাসনিক কর্তারা আশঙ্কা করছেন, শিশুদের মৃত্যুর পেছনে রয়েছে বিষাক্ত কফ সিরাপ। ‘ডেক্সট্রোমেথরফান হাইড্রোব্রোমাইড’ উপাদানযুক্ত একাধিক সিরাপকে চিহ্নিত করে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব ব্যাচের ওষুধ বাজার থেকে তড়িঘড়ি প্রত্যাহার করা হয়েছে।ছিন্দওয়াড়ার পারাসিয়া সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট শুভম যাদব নিশ্চিত করেছেন, মৃতদের মধ্যে অন্তত পাঁচজন শিশু ‘কোল্ডরেফ’ (Coldref) নামক কফ সিরাপ খেয়েছিল, আর একজন খেয়েছিল ‘নেক্সট্রো’ (Nextro)।

    জেলার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ১,৪২০ শিশু জ্বর ও ফ্লু-জাতীয় উপসর্গে আক্রান্ত। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— দুই দিনের বেশি অসুস্থ থাকলে শিশুকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরও গ্রামে এএসএইচএ কর্মীরা (ASHA) প্রতিনিয়ত নজর রাখবেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, শিশুদের ভাইরাল জ্বর বা কাশির ক্ষেত্রে বাড়িতে আলাদা চিকিৎসা না দিয়ে সরাসরি সরকারি হাসপাতালে পাঠাতে হবে। জেলা প্রশাসন বলছে, চিকিৎসার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থাই এখন একমাত্র উপায়।

    এদিকে, জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (NCDC) ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে। তারা জল, কীটতত্ত্ব এবং ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করেছে ছিন্দওয়াড়া ও সিকার থেকে। পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা হবে, এটি কোনও সংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে নাকি কফ সিরাপই মূল অপরাধী। ফলাফল শিগগিরই রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল অথরিটির হাতে তুলে দেওয়া হবে।

    রাজস্থানে তিন শিশুর মৃত্যুর পর মেডিকেল সার্ভিসেস কর্পোরেশন ইতিমধ্যে সন্দেহভাজন সিরাপের ১৯টি ব্যাচ নিষিদ্ধ করেছে। চিকিৎসক, অভিভাবক ও ফার্মাসিস্টদের সতর্ক থাকতে জরুরি নির্দেশ জারি হয়েছে।

    কংগ্রেসের অভিযোগ, এই ওষুধ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ‘মুখ্যমন্ত্রী নিঃশুল্ক দাওয়া যোজনা’ (Mukhyamantri Nihshulk Dawa Yojana)-র আওতায় সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল। আরও গুরুতর অভিযোগ— যেই কোম্পানি ‘কেসন্স’ (Kayson’s) এই সিরাপ তৈরি করেছে, তা নাকি আগেই ভেজাল ওষুধ সরবরাহের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছিল! তবুও সেই সংস্থার ওষুধ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালেই পৌঁছে যাচ্ছে— যা প্রশাসনিক গাফিলতির প্রকট প্রমাণ।

    কোলাহলময় খেলার মাঠ আজ নিস্তব্ধ, অসংখ্য পরিবারের বুক আজ শূন্য। মায়েদের কান্না, বাবাদের ভাঙা কণ্ঠ— সব মিলিয়ে গ্রামগুলিতে নেমে এসেছে গভীর শোক। অভিভাবকরা এখন একটাই প্রশ্ন করছেন: “আমাদের সন্তানদের প্রাণ কে নিল? কফ সিরাপ নাকি প্রশাসনিক অবহেলা?”

    সত্যিই, মৌসুমি জ্বর ভেবে শুরু হওয়া চিকিৎসা এখন গোটা দুই রাজ্যে শোকের অশ্রুজলে ভাসাচ্ছে। পরীক্ষাগার থেকে রিপোর্ট আসার অপেক্ষায় দিন কাটছে, আর এদিকে আরও কত ছোট্ট প্রাণ বিপন্ন হতে পারে— সেই আতঙ্কে রাত কাটছে অভিভাবকদের। এই মর্মান্তিক ঘটনায় ওষুধ কোম্পানিগুলির দায়, সরকারি নজরদারির ঘাটতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অদক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে।
  • Link to this news (আজকাল)