কল্যাণী-চন্দননগরে আকস্মিক ঝড়-বৃষ্টিতে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
উৎসবের আমেজ শেষ হওয়ার আগেই ফের প্রকৃতির রুদ্ররূপ। সন্দেশখালির বিধ্বংসী ঝড়ের একদিনের মধ্যেই ভয়ঙ্কর ঝড়ে তছনছ হয়ে গেল নদিয়ার হরিণঘাটার বিরহী গ্রাম ও হুগলির চন্দননগর। ভোরের অঝোর বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল বেশ কিছু এলাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভোর পাঁচটার সময় আচমকাই ঝড় আছড়ে পড়ে হরিণঘাটা ব্লকের বিরহী ২ নম্বর পঞ্চায়েতের নারায়ণপুর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোয়। কয়েক মিনিটের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ১৭টি বাড়ি। ভেঙে যায় প্রায় ডজনখানেক বাড়ি, একাধিক বাড়িতে উড়ে যায় টিনের চাল। বহু বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গিয়ে পড়েছে অনেক দূরে। শুধু তাই নয়, ভেঙে পড়ে একাধিক পাঁচিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আসবাবপত্র। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কলা চাষে। ঝড়ের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই সকাল এগারোটা নাগাদ প্রবল বৃষ্টিতে কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের কথায়, এই আকস্মিক ঝড় নাকি ‘আমফানের থেকেও ভয়াবহ’।
জানা গিয়েছে, হঠাৎ করে ঘন কালো মেঘে আকাশ ঢেকে যায় এদিন। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় ঝড়। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ঝড়ের সময় এতটাই শব্দ হচ্ছিল যে অনেকেই ভয় পেয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
একই ছবি ধরা পড়েছে হুগলির চন্দননগরেও। ভোরের দিকে হঠাৎ দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি নামতেই নারুয়া শান্তিরমাঠ এলাকায় ভেঙে যায় পুজো মণ্ডপ। ঝড়ে ভেঙে পড়ে মণ্ডপে টাঙানো ঝাড়বাতি। বাড়ির চাল উড়ে গিয়ে বহু পরিবার বিপাকে পড়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ‘টর্নেডোর মতো পাক খেয়ে হঠাৎ ঝড় এসে মুহূর্তের মধ্যে তছনছ করে দিয়েছে চারপাশ।’
প্রসঙ্গত, এর আগের দিন দশমীর বিকেলেই সন্দেশখালির পাথরঘাটা এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছিল মাত্র ৫০ সেকেন্ডের টর্নেডোয়। শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন অন্তত ছ’জন। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গোটা অঞ্চল অন্ধকারে ডুবে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনের উদ্যোগে ত্রাণ পাঠানো শুরু হয়েছে।
বার বার প্রকৃতির এই আচমকা তাণ্ডবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে দুই জেলাজুড়ে। গ্রামের মানুষ বলছেন, এমন দুর্যোগ একের পর এক আসতে থাকলে পুজোর আনন্দ কোথায় আর থাকে! তাঁদের প্রশ্ন, উৎসবের শেষে কি তবে আরও ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে এই ঝড়?
কল্যাণীতে আচমকা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে একটি দল পাঠানো হয়েছে। হরিণঘাটা ব্লকের ব্লক আধিকারিক মহাশ্বেতা বিশ্বাস বলেন, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় ও ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৭টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্লক প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে দ্রুত আর্থিক সাহায্য ও পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।