• মমতা অভিযোগ করার পর কয়েক ঘণ্টাও কাটেনি, জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিল ডিভিসি! আশঙ্কায় তিন জেলা
    আনন্দবাজার | ০৩ অক্টোবর ২০২৫
  • পুজোর মরসুমে কেন না-জানিয়ে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) জল ছেড়েছে, প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিতর্কের আবহেই মাইথন এবং পাঞ্চেত, দুই জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করল ডিভিসি। জানা গিয়েছে, ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে দুই জলাধার থেকে। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ডিভিসির এক কর্তা বলেন, ‘‘ডিভিসি নিজের ইচ্ছায় জল ছাড়ে না। জল ছাড়তে আমরা বাধ্য। এবং আবারও বলছি, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড সরকারকে জানিয়েই জল ছাড়া হয়।’’

    গত এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে ঝাড়খণ্ডে। এ রাজ্যে পশ্চিম বর্ধমানেও বর্ষণ অব্যাহত। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ, সর্বত্রই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যেই নিম্নচাপের বৃষ্টিতে টইটম্বুর ডিভিসির জলাধার। শুক্রবার বিকেলে ডিভিসি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ৭০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া শুরু করেছে তারা। মাইথন জলাধার থেকে ৪২ হাজার ৫০০ কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ২৭ হাজার ৫০০ কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে দামোদর তীরবর্তী অঞ্চলগুলির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করেছে তারা।

    ফলত, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলা আবার জলমগ্ন হতে পারে। এমনিতে গত দু’দিন ধরে আসানসোল, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। সেই জলও মিশছে দামোদর নদে। ফলে দুর্গাপুরে রাজ্য সেচ দফতরের জলাধারেরও জলধারণ ক্ষমতা পেরিয়েছে। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিশেষ করে বর্ধমান, হাওড়া এবং হুগলি জেলায় দামোদর তীরবর্তী এলাকাগুলিতে সতর্কতা জারি হয়েছে।

    শুক্রবার সকালে রাজ্যবাসীকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিভিসি-কে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আনন্দ, উল্লাস এবং নতুন আশার সময়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে শান্তিতে উৎসব শেষ করতে দেওয়ার বদলে, ডিভিসি কর্তৃপক্ষ রাজ্যকে আগাম বার্তা না-দিয়ে ৬৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়ে দিয়েছেন।’ শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এটা ‘বাংলাকে বিসর্জন’ দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্র।’ ওই কেন্দ্রীয় সংস্থাকে নিশানা করে তিনি এ-ও লেখেন, ‘এই বেপরোয়া কাজ আমাদের পবিত্র উৎসবের মধ্যে দুর্দশা তৈরির প্রচেষ্টার কম নয়। এমন একতরফা পদক্ষেপ লজ্জাজনক এবং অস্বীকার্য।’

    উল্লেখ্য, গত জুন-জুলাই মাসেও হাজার হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল ডিভিসি। সেই সময় এমনিতেই নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টির ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, হুগলির মতো জেলায়। তার মধ্যে ডিভিসি-ও জল ছাড়ায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল। যা নিয়ে রাজনৈতিক পরিসরে বিস্তর বিতর্ক হয়। ডিভিসির বিরুদ্ধে না-জানিয়ে জল ছাড়ার অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি ডিভিসির জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি (ডিভিআরআরসি) থেকে রাজ্যের দুই প্রতিনিধি পদত্যাগ করেছেন। ডিভিসির বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শ্রমিকদের স্বার্থে এই পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দেয় শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি।

    শুক্রবার বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনে গিয়েছিলেন আরামবাগের সাংসদ মিতালী বাগ। ছিলেন ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েক জন তৃণমূল নেতা। তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানোর পর ওই নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় ডিভিসি-র ছাড়া জলের মোকাবিলায় নামতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। মিতালীকে নিজের লোকসভা কেন্দ্রে ফিরে কাজ শুরু করতে বলেন তৃণমূলনেত্রী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, অজিত মাইতি, প্রদ‍্যোৎ ঘোষদের উদনারায়ণপুরের মতো যে সব এলাকা ডিভিসি-র জলে প্লাবিত, সেই সব এলাকায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

    অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিভিসির দাবি, জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ড জল ছাড়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। জল ছাড়া বা না-ছাড়া ডিভিসির হাতে থাকে না। পাশাপাশি তারা জানিয়েছে, মহালয়ার সময় জল ছাড়া হচ্ছিল। তখনই সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল জেলাগুলিকে। যে কারণে মহালয়ার তর্পণ নিয়েও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছিল প্রশাসন।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)