গাঁজা পাচার চক্রের কিংপিন প্রাক্তন এনএসজি কমান্ডো পুলিশের জালে, ২৬/১১ মুম্বই হামলায় লড়েছিলেন পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে
বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
জয়পুর: ২৬/১১ মুম্বই হামলার সময় উর্দি গায়ে তাজ হোটেলে পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। এহেন প্রাক্তন এনএসজি কমান্ডোই আন্তঃরাজ্য গাঁজা পাচার চক্রের কিংপিন! রাজস্থান পুলিশ জানিয়েছে, বজরং সিং নামে ওই প্রাক্তন এনএসজি কমান্ডোকে চুরু জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার রাতে রাজস্থানের সন্ত্রাস দমন শাখা (এটিএস) এবং মাদক বিরোধী টাস্ক ফোর্সের (এএনটিএফ) যৌথ অভিযানে অভিযুক্তের গোপন ডেরা থেকে উদ্ধার হয়েছে ২০০ কেজি নিষিদ্ধ মাদক।
আদতে সিকর জেলার বাসিন্দা বজরং সিংকে দীর্ঘদিন ধরেই হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। ঘোষণা হয়েছিল ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার। পুলিশের আইজি বিকাশ কুমার বলেন, ধৃত প্রাক্তন এনএসজি কমান্ডো ওড়িশা ও তেলেঙ্গানা থেকে রাজস্থানে গাঁজা পাচার করতেন। টানা দু’মাসের নিরলস পরিশ্রম ও নজরদারির সুফল মিলেছে। এটিএস এবং এএনটিএফ ‘অপারেশন গাঁজানে’ চালিয়ে গ্রেফতার করেছে বজরং সিংকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দশম শ্রেণির পর পড়াশোনায় ইতি টেনেছিলেন বজরং। ছ’ফুট উচ্চতা ও সুঠাম চেহারার হাত ধরে পরে বিএসএফে চাকরি পান। বিএসএফ কনস্টেবল হিসেবে দীর্ঘদিন পাঞ্জাব, অসম, রাজস্থান, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে সীমান্তরক্ষার কাজ করেছেন। আবার মাওবাদী দমন অভিযানেও অংশ নিয়েছেন তিনি। দেশরক্ষায় তাঁর অবদানের কারণেই এনএসজি কমান্ডো পদে উন্নীত হয়েছিলেন। সেই সূত্রেই ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার সময় পাক জঙ্গিদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছিলেন। ২০২১ সালে রাজনীতি পা রাখেন বজরং। রাজস্থানে নিজের গ্রামে ফিরে একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী প্রার্থী হয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, রাজনীতিতে থাকাকালীনই অপরাধীদের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু হয় বজরংয়ের। শাগরেদদের মাধ্যমে জানতে পারেন, গাঁজা বেচে আর্থিকভাবে বিশাল লাভবান হওয়া সম্ভব। বিএসএফে থাকাকালীন ওড়িশা ও তেলেঙ্গানায় নিজের অভিজ্ঞতা ও যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে গাঁজা পাচারের কাজে নেমে পড়েন। এক বছরের মধ্যেই গাঁজা সিন্ডিকেটের পান্ডা হয়ে ওঠেন প্রাক্তন এই এনএসজি কমান্ডো। ২০২৩ সালে একবার হায়দরাবাদের কাছে দু’কুইন্টাল গাঁজা সহ গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। পরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের পাচারের কাজে নেমে পড়েন। কিন্তু এবার বাড়তি সন্তর্পণে নেটওয়ার্ক চালাতে থাকেন। পুলিশের নজরদারি এড়াতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন যৎসামান্য। কাজ চালাতেন পরিচয় বদল করে। এরই মধ্যে পুলিশের কাছে একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করে। দু’মাস আগে গোপনে শুরু হয় অভিযান। বজরং সিংয়ের রাঁধুনীর উপর নজরদারি চালিয়ে অবশেষে তাঁর হদিশ মেলে। বুধবার পুলিশ প্রথমে দেখতে পায় বজরং মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রাক্তন এনএসজি কমান্ডো হওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে সেই সময় তাঁকে গ্রেফতার না করে গতিবিধির উপর নজর রাখা হয়। সেই সূত্রেই গোপন ডেরার খোঁজ মেলে। এটিএস এবং এএনটিএফ রাতে সেই ডেরায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গাঁজা সহ বজরং সিংকে গ্রেফতার করে।