• এসআইআরে ১২ শতাংশের ভোটার রাজনীতি, বিহারে ফারাক ৯০ লক্ষের!
    বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
  • পাটনা: চার থেকে পাঁচ শতাংশের ভোট স্যুইংয়ে একটি সরকার পড়ে যায়। ধুঁকতে থাকা সরকার উঠে দাঁড়ায়। বিরোধীদের তৈরি করা জমিও বরবাদ হয়ে যায়। বিহারে কোন সমীকরণে হতে চলেছে আসন্ন ভোট? এই প্রশ্নটাই এখন লাখ টাকার। কারণ, ৬৮ লক্ষ ভোটার ‘বিয়োগ’ এবং প্রায় ২২ লক্ষ নাম ‘যোগ’ করার পর ইন্টেনসিভ রিভিশনের ফলটা কী? ভোটার তালিকায় ৯০ লক্ষ নামের ফারাক। অর্থাৎ, ১২ শতাংশ! ফলে নির্বাচন কমিশন যতই শুদ্ধভাবে ‘ভোটার তালিকা শুদ্ধকরণে’র দাবি জানাক না কেন, আসন্ন ভোটযুদ্ধে তার প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়তে চলেছে। সেই বার্তা নিয়েই জ্বলজ্বল করছে ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এসআইআর। ৭ কোটি ৮৯ লক্ষের ভোটার তালিকা কমে থেমেছে ৭ কোটি ৪২ লক্ষে। কমিশন বলছে, ২১ লক্ষ ৫৩ হাজার নতুন ভোটার তো যোগ হয়েছে। কিন্তু বিরোধীরা দেখছে বাদ যাওয়া ৬৮ লক্ষ নাম। তাদের মধ্যে রয়েছে বহু মহিলা এবং সংখ্যালঘু শ্রেণির মানুষ এবং তারা আসলে কংগ্রেস-আরজেডি’র ভোটব্যাংক। 

    সত্যিই কি তাই? উত্তর মিলবে আসন্ন ভোটে। এমনিতেই এসআইআরকে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে লাগাতার দাবি করে এসেছে বিরোধী দলগুলি। কমিশন নির্দেশিত নথির তালিকায় আধার-ভোটার সংযুক্তির দাবি উঠেছে। হস্তক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্টও। তারপরও চলেছে ‘কাটাকুটি’র খেলা। আর দিনের শেষে ‘১২ শতাংশের ভোটার রাজনীতি’। বিরোধীদের প্রশ্ন, এক বছর আগে তো এই তালিকাতেই লোকসভা ভোট হয়েছে। তাহলে সেটাও ছিল ভুলে ভরা? এতদিন ধরে তালিকায় যে নাম যোগ হয়েছে বা বাদ গিয়েছে, তা সঠিক ছিল না? নাকি এক বছরের মধ্যেই ৬৮ লক্ষ মানুষ হয় মারা গিয়েছেন, বা বিহার ছেড়েছেন? ১ আগস্ট খসড়া তালিকা প্রকাশের পরই অবশ্য কমিশন দাবি করেছিল, ৩৬ লক্ষ ভোটার পাকাপাকিভাবে অন্যত্র বসবাস করছেন। আর বাকি ২২ লক্ষ মৃত। আর তাতেই তোলপাড় শুরু হয়েছিল। সেই প্রশ্নই আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। এখন অন্যত্র পাড়ি দেওয়া ভোটারের সংখ্যা ৩৮ লক্ষ। ২১ লক্ষ নতুন ভোটার নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা—সব অন্তর্ভুক্তি সঠিক তো? নাকি উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের ভোটার ঢুকে পড়েছে? কমিশন যদিও দাবি করছে, গোটা তালিকা রাজনৈতিক দলগুলির হাতে দিয়ে দেওয়া হবে। তারা ভুল বের করুক। আরজেডি’র দাবি, ‘চূড়ান্ত তালিকায় সাড়ে চার লক্ষ নতুন ভোটার নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারছে না কমিশন। ওরা সব বিজেপির ভুয়ো ভোটার।’ লালুপ্রসাদের দলের মুখপাত্র চিত্তরঞ্জন গগন বলেছেন, ‘কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৬ লক্ষ ৫৭ হাজার মানুষ নতুন করে সংযুক্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখন ওরা বলছে প্রায় ২২ লক্ষ নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। এই ছ’লক্ষ নতুন ভোটার কারা?’

    পরিসংখ্যান বলছে, গোপালগঞ্জ জেলায় প্রায় দেড় লক্ষ মহিলা ভোটার বাদ পড়েছে। জানুয়ারিতে এখানে ভোটার সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ ৩০ হাজার। এখন ৮ লক্ষ ৩০ হাজার। শুক্রবার ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’র অধীনে ২৫ লক্ষ মহিলার জন্য ২৫০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এবার তা নিয়েই আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। তাদের বক্তব্য, একদিকে মোদির ‘বন্ধু’ নীতীশ মহিলাদের মন জিততে টাকা বিলিয়ে চলেছেন। অন্যদিকে এসআইআরে বাদ পড়েছে লক্ষ লক্ষ মহিলার নাম। এই বিড়ম্বনার যোগ্য জবাব দেবে বিহারের আম জনতা। আর সুপ্রিম কোর্টও কিন্তু জানিয়ে রেখেছে, বেআইনি কিছু বুঝলে গোটা এসআইআর প্রক্রিয়াই তারা বাতিল করে দেবে। এখন অপেক্ষা আইনি বিশ্লেষণের।
  • Link to this news (বর্তমান)