• সূচনা দিল্লি! প্রথম শ্রেণিতেই আরএসএস বন্দনা
    বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: আর লুকিয়ে-চুরিয়ে গৈরিকীকরণের চেষ্টা নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে এবার সরাসরিই আরএসএস বন্দনা হবে। দিল্লির বিজেপি সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সিলেবাসের অংশ হতে চলেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। সেইমতোই দিল্লির সরকারি স্কুলগুলির বিশেষ মডিউলে ‘রাষ্ট্রনীতি’র অন্যতম পাঠ হিসেবে স্থান পাচ্ছে সংঘ বন্দনা। ফলে একেবারে প্রথম শ্রেণি থেকেই আরএসএস স্তুতি মজ্জাগত করে ফেলতে হবে স্কুল পড়ুয়াদের। আরএসএসের শতবর্ষকে সামনে রেখে সরকার এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের স্তরে যেভাবে সংঘের তুষ্টিকরণ চলছে, তাতে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বিরোধী মহলে। তারা প্রশ্ন তুলছে, সিলেবাসের গেরুয়াকরণের ভিত কি এভাবে দিল্লিতেই স্থাপন হয়ে গেল? এরপর ধাপে ধাপে অন্য রাজ্য? কারণ, সংঘের ইতিহাস, সংস্কৃতি থেকে দেশ গঠনে সংগঠনের অবদান—এই সবই পড়তে হবে দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের। এখানেই শেষ নয়। এই সংক্রান্ত পাঠ্যসূচিতে থাকছে সাভারকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জীবনীও। জানা যাচ্ছে, এ ব্যাপারে পাঠদানের জন্য ইতিমধ্যেই দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বিশেষ হ্যান্ডবুক তৈরি হয়েছে। সেইমতো শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ পর্বও শুরু হয়ে গিয়েছে। 

    এই ‘রাষ্ট্রনীতি’ হল দিল্লির সরকারি বিদ্যালয়গুলির নতুন সিভিক এডুকেশন কর্মসূচি। দিল্লিতে এই মুহূর্তে এক হাজারের কিছু বেশি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে একটি বড় অংশই সিবিএসইর পাঠ্যসূচি মেনে চলে। সেইমতো পরিকল্পনা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহে শনিবার ‘রাষ্ট্রনীতি’র এই বিশেষ মডিউলের ক্লাস করানো হবে দিল্লি সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে। এর ফলে অন্যান্য পাঠ্যসূচির সময় যেমন কমবে না, তেমনই অন্য ক্লাসের উপরও প্রভাব পড়বে না।

    স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে—দেশের মানুষকে এই কথা বোঝাতে দীর্ঘদিন ধরেই অতি তৎপর বিজেপি তথা গেরুয়া শিবির। কিন্তু বিরোধী দলগুলি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংঘ পরিবারের কোনওরকম অবদান মানতে নারাজ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এবার স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের ভূমিকার পাঠ দিতেই মূলত উদ্যোগী হয়েছে গেরুয়া শিবির। সেইমতো ‘রাষ্ট্রনীতি’তে সংঘ পরিবারের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি নিয়ে যেমন আলোচনার পরিকল্পনা হয়েছে, তেমনই বিগত ৮০-১০০ বছরের মধ্যে রাষ্ট্র গঠনে তারা কী ভূমিকা পালন করেছে, তাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উল্লেখ করার ব্যাপারে ভাবা হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর কীভাবে রক্তদান শিবির কিংবা ত্রাণ সরবরাহ অথবা অন্য পন্থায় বিপর্যস্ত মানুষের জন্য সংঘ কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, বিশেষ মডিউলে তারও উল্লেখ থাকছে। কিন্তু স্কুলের পড়ুয়ারা কেন সংঘের ইতিহাস, সংস্কৃতির পাঠ নেবে? এটা কি সরাসরি গেরুয়াকরণের চেষ্টা নয়? এহেন প্রশ্ন তুলে ইতিমধ্যেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে আপ, সিপিএমের মতো রাজনৈতিক দলগুলি। সঙ্গে থাকছে আশঙ্কার মেঘও। ইতিহাস বদলে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা কেন্দ্রের তরফ থেকে চলছে বলে বিরোধীরা লাগাতার অভিযোগ করে চলেছে, গেরুয়াকরণের এই নয়া সিদ্ধান্ত সেই প্রক্রিয়াকেই ইন্ধন দেওয়ার জন্য নয় তো? 
  • Link to this news (বর্তমান)