• বিসর্জনেই বোধন, একাদশীতে ভাণ্ডানী পুজোয় মেতে উঠল ময়নাগুড়ির বার্নিশ
    বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: বিসর্জনেই বোধন। বাহন বদলে ফের একাদশীতে মণ্ডপে মা দুর্গা। তবে মহিষাসুরমর্দিনী নন, শস্যের দেবী ভাণ্ডানী রূপে পূজিতা হলেন তিনি। চারদিকে যখন দশমীতে মা দুর্গার বিসর্জন ঘিরে বিষাদের সুর, তখন মা ভাণ্ডানীর আরাধনার মধ্যে দিয়ে নতুন করে পুজোর আনন্দে মেতে উঠল ময়নাগুড়ির বার্নিশ ও মাধবডাঙা। ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকায় তিস্তা, তোর্সা ও কালজানি নদীপাড়ে পুজো শেষে এই ‘অন্য’ উমার আবাহন ঘিরে রয়ে গিয়েছে উৎসবের আমেজ। গ্রাম্যবধূর আদলে দেবীমূর্তি। মুখে মঙ্গোলীয় জনজাতির ছাপ স্পষ্ট। 

    মূলত রাজবংশী সম্প্রদায় এই পুজোর আয়োজন করে। কোথাও পুজো একদিনের, কোথাও বা তিনদিনের। মা দুর্গার দশহাতের বদলে এখানে দেবী দ্বিভূজা। সিংহের বদলে বাহন বাঘ। অসুর থাকে না। তবে মা ভাণ্ডানীর সঙ্গে থাকে লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গণেশ। জঙ্গলে এই দেবীর আরাধনা শুরু হয়েছিল বলে অনেকে মা ভাণ্ডানীকে বনদুর্গা বলে থাকেন। ডুয়ার্সে মেটেলির দক্ষিণ ধূপঝোরায় ভাণ্ডানীর বাহন হিসেবে সিংহ থাকে। এখানে মা দুর্গার চার সন্তানের সঙ্গে পুজো পায় মহাকাল। জঙ্গল থেকে হাতি বেরিয়ে যাতে কোনও ক্ষতি না করে, সেই প্রার্থনাতেই মহাকালের পুজো করে থাকেন বাসিন্দারা। কুমারগ্রামের নারারথলি গ্রামেও পূজিত হন মা ভাণ্ডানী।  

    জনশ্রুতি, দশমীতে গাঁয়ের বধূর বেশে উত্তরের বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে কৈলাসে ফিরছিলেন উমা। রাতের অন্ধকারে অরণ্যের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে পথ হারিয়ে ফেলেন তিনি। পথভ্রষ্ট ওই বধূকে দেখতে পেয়ে নিজেদের গ্রামে নিয়ে যান রাজবংশী সমাজের কিছু লোক। চাষির ঘরে রাত কাটিয়ে পরদিন ফের কৈলাসের পথ ধরেন উমা। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁর আপ্যায়নে ত্রুটি রাখেননি চাষিঘরের মেয়ে-বউরা। সেই আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে দেবী নিজের আসল পরিচয় দেন। চাষির গোলা যাতে সারাবছর শস্যে পরিপূর্ণ থাকে, তার বর দিয়ে যান। সেই থেকেই একাদশীতে দুর্গার আবাহন শুরু হয় উত্তরবঙ্গে।

    ময়নাগুড়ির বার্নিশে ভাণ্ডানী পুজো কমিটির সহ সভাপতি দীনেশচন্দ্র রায় বলেন, চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে শস্যের দেবী হিসেবে ভাণ্ডানীর পুজো হয়ে আসছে। একদিনের পুজো। একাদশীতে এই পুজো ঘিরে বিরাট মেলা বসে। ভক্ত-দর্শনার্থীরা দূরদূরান্ত থেকে আসেন। মনোস্কামনা পূরণ হওয়ায় তাঁরা পুজো দেন। এখানে ভাণ্ডানী পুজোয় পাঁঠা বলি হয়। পুজোর পর উড়িয়ে দেওয়া হয় মানতের পায়রা। ময়নাগুড়ির বার্নিশে বড় ভাণ্ডানীর পুজো হয়ে থাকে। পাশেই মাধবডাঙা অঞ্চলে হয় ছোট ভাণ্ডানীর পুজো।

    এদিন বার্নিশে ভাণ্ডানী পুজোয় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ভিড় জমিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। জনসংযোগে ব্যস্ত রাজনৈতিক নেতারা। উপস্থিত খোদ বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি শ্যামল রায়। রয়েছেন যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি রামমোহন রায়। মেলা ঘোরার পাশাপাশি দিনভর চুটিয়ে জনসংযোগ সারেন তাঁরা। পুজো প্রাঙ্গণের স্টল থেকে চলে জল-মিষ্টি বিতরণ।
  • Link to this news (বর্তমান)