সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: ষষ্ঠী থেকে দশমী, পুজোর এই পাঁচ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবার মোট ৭৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সারা বছরে প্রতিদিনের মৃত্যুর গড় হিসেব থেকে কম। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার পুজোর পাঁচ দিনে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ৬২ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। তবে এবার কোনও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা নেই বলে জানান হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার দেব কুমার প্রধান। তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৭ থেকে ১৮ জন রোগীর মৃত্যু হয়। সেখানে পুজোর পাঁচ দিনে গড়ে ১৬ জনের কম রোগী মারা গিয়েছেন।
এদিকে, পুজোর পাঁচ দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও ডাহা ফেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। হাসপাতালের প্রতিটি করিডর ও ওয়ার্ডের সামনে জঞ্জাল, রোগীর পরিবারের লোকদের উচ্ছিষ্ট খাবার থেকে শুরু করে গোবর নানা ধরনের জঞ্জাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে করিডরে রোগীর পরিবারের লোকেরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন তাঁদের প্রিয়জনের সুস্থতার খবরের অপেক্ষায় বা দেখভালের জন্য। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে পুজোর দিনগুলিতে কর্তৃপক্ষের এই উদাসীনতা নিয়ে রোগীর পরিজনরা ক্ষুব্ধ।
শুক্রবার সকালে গণেশ সাহা নামে এক ব্যক্তি হাইব্রিড সিসিইউ ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে এনিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে আমার আত্মীয় অসুস্থ হয়ে এখানে ভর্তি রয়েছেন। সারা দিন আমার এখানে কাটছে। চারদিকে চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ঠিকমতো সাফাই হয় না। যেখানে সেখানে লোক বসে খাওয়া-দাওয়া করছে। সেখানেই উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলে চলে যাচ্ছে। হাসপাতালকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নজরদারির জন্য কারও দেখা মেলেনি। এই পরিবেশে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।
পুজোর দিনগুলিতে হাসপাতলে আধিকারিক বলতে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ও একজন ডেপুটি সুপার ছিলেন। অভিযোগ, তাঁদেরকেও বেশিক্ষণ অফিসে দেখা যায়নি। চূড়ান্ত অরাজকতার মধ্যে ট্রলি নিয়ে অভিযোগ এদিনও অব্যাহত ছিল। শিলিগুড়ির মিলনপল্লির বাসিন্দা ছায়া বাগচি অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার দেব কুমার প্রধানের কাছে এনিয়ে সরাসরি অভিযোগ জানান। তাঁর স্বামী শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে এসেছেন। ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও এক্সরে করার জন্য ওয়ার্ড থেকে স্বামীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলি পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ২৫ নম্বর কাউন্টারে ট্রলি এবং কোনও কর্মীর দেখা মেলেনি। আমার স্বামীকে দ্রুত এক্সরে করাতে হবে। তা নাহলে চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে না। ট্রলির অভাবে এভাবে ফেলে রাখলে আমার স্বামীর দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই অভিযোগ পাওয়ার পর দেব কুমার প্রধান উদ্যোগ নিয়ে ছায়াদেবীর স্বামীর জন্য ট্রলির ব্যবস্থা করেন।