কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে সবার সঙ্গে সিঁদুর খেললেন রানিমা
বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। দশমীতে সিঁদুর খেলায় মাতেন হাজারো মানুষ। বিদায়ের সুর বাজলেও ভক্তদের মনে শুধু একটাই প্রতীক্ষা-‘আশ্বিনে আবার আসিস মা।’ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির নাটমন্দিরে চার শতাব্দী প্রাচীন দুর্গোৎসবের শেষ দিনে হাজারো মানুষের ভিড়ে উৎসবের আবহে যেন গমগম করে মন্দির চত্বর।
দশমীর দিন সকাল থেকেই রাজবাড়িতে ভিড় জমতে শুরু করে। দশমীতে মাকে ফল প্রসাদ, পান্তা ভাত, কচুর শাক, টক, মিষ্টান্ন ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। পুজোর পর প্রাচীন রীতি মেনে প্রথমে রানিমা মাকে বরণ করেন। তারপর সকলে মিলে দুর্গা মাকে বরণ এবং সিঁদুর খেলা শুরু হয়। রানিমাও এই সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করেন। আনন্দ মিলেমিশে তৈরি করে এক অদ্ভুত পরিবেশ। চারপাশ যেন লাল রঙের আবরণে ঢেকে যায়। সিঁদুর খেলায় মহিলাদের পাশাপাশি বাচ্চা থেকে বয়স্করাও যোগ দেন।
সিঁদুর খেলা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি। প্রথা মেনে রানিমা রাজবাড়ি ছাদ থেকে দুর্গা মাকে আরও একবার দর্শন করেন। তারপর মাকে ঢাকের তালে, শঙ্খধ্বনির ও উলুধ্বনির সঙ্গে কাঁধে চাপিয়ে দুলিয়ে দুলিয়ে রাজবাড়ির দিঘির ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে গিয়ে চোখ ভিজে ওঠে অনেকের।
রাজবাড়ির গৃহবধু অমৃতা রায় বলেন, সকলের জন্য সিঁদুর খেলা ২০০২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এভাবে সিঁদুর খেলার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই ছিল। আমার মামারবাড়ি জমিদার বংশ। সেখানেও সকলে মায়ের পুজোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। সেজন্যই এটা শুরু করেছিলাম। সিঁদুর খেলার পর হয় আমাদের পরিবারের বিশেষ রীতি যাত্রামঙ্গল আচার। যাত্রা মঙ্গল আসলে মা এলেন, এবার বিদায়ের পালা। আবার এক বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমাদের তো এগোতে হবে। তাই ভালো খারাপ সব দেখে আমরা আরও এক বছরের জন্য যাত্রা শুরু করলাম। এই আচার রীতির জন্য অগ্নি, ধান, দুব্য, বিজয় পতাকা, ফুল, হাতি, ঘোড়া, বাছুর, দই, ঘি, সোনা, রুপো, গণিকা, রাজা-রানি, মাছ, মাংস, মধু, পুরোনো কুম্ভ প্রয়োজন হয়। এসব দেখে রাজবাড়ির দিকে যাওয়া হয় ও ঠাকুর ঘরে গিয়ে শান্তিজল নেওয়া হয়। তখন ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয় যে, মা পরিবারের ডাকে মর্ত্যে এসে সকলকে আশীর্বাদ করে গেলেন এবং আমাদের পুজো ও ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
রাজবাড়ির প্রতিনিধি অরিন্দম দে বলেন, এ বছর বীরভূম থেকে ৯টি ঢাক ও বাজনা এসেছিল। ৪০জনের বেশি বেয়ারা ছিল। সেইসঙ্গে আলোকসজ্জা ও অসংখ্য ঝাড়বাতি রাজবাড়ির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলেছিল।।
কলকাতা থেকে আগত মহিলা স্নেহা মণ্ডল বলেন, ছোট থেকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির সিঁদুর খেলার কথা শুনে আসছি। কিন্তু এখানে আসা হয়ে ওঠেনি। এবছর এসে ভিড় দেখে অবাক হয়ে গিয়েছি। রানিমা সকলের সঙ্গে সিঁদুর খেলছেন, এটা ভাবাই যায় না।